The Butterfly Effect (2004)



'বাটারফ্লাই ইফেক্ট' ফেনোমেনোনটার সাথে পরিচিত নয়, এরকম মানুষ আমি দেখিনি বললেই চলে - সিনেমার শুরুতেই কেওস থিওরির এই টপিকটার সাথে একটা পরিচিতি করিয়ে দেওয়া হয়; সোজা ভাষায় বলতে গেলে, ছোট ছোট বিষয়গুলো কিভাবে বড় একটা ঘটনার কারণ হয়ে দাঁড়ায়, এটি 'বাটারফ্লাই ইফেক্ট' এর মূল বক্তব্য। যদি এই ব্যাকগ্রাউন্ডটি দিয়ে একটা সাই-ফাই ঘটনা বা সিনেমা দাঁড় করানো যায়  - জটিল একটা ব্যাপার, চিন্তা করাই যায়!

তবে সিনেমাটিকে মেইন্সট্রিম ধাঁচের সিনেমা বললেই ভালো হবে - ক্রিটিকদের দুই চোখের বিষ, দর্শকদের কাছে সফল। সিরিয়াস সিনেফাইলদের কাছে '৪০ মিনিটের পর ডিএনএফ'। পার্সোনালি, আমার কাছে সিনেমাটিকে বেশ ইন্টেরেস্টিং-ই মনে হয়েছে প্রথম দেখার ক্ষেত্রে। মূলতঃ শিশু ইভানের জীবনে বেশ কিছু ঘটনা ঘটে যায়, যার মোক্ষম মূহূর্তে সে জ্ঞান হারিয়ে ফেলে এবং তখনকার ঘটনা সে কিছুতেই মনে করতে পারেনা। পরবর্তী জীবনে সে যখন এই ঘটনাগুলোর রহস্য উদ্ঘাটন করতে যায়, তখন এর ফলাফল হিসেবে নেমে আসে দুর্যোগ। একসময়ে সে আবিষ্কার করতে পারে যে তার ক্ষমতা আছে অতীতে ফিরে যাবার, এবং এভাবে সে অনেকগুলো জটিলতাকে সমাধান করার চেষ্টা করে - কিন্তু এর চেয়ে সুদূরপ্রসারী ফলাফল তা সে চিন্তা করতে পারেনা, যার ফলে সৃষ্টি হয় আরো জটিলতার।




এরকম একটা সিনোপসিসই আমাকে টেনেছিল। বোঝাই যাচ্ছে এখানে টাইম ট্রাভেল থিওরি এপ্লাই করেছেন চিত্রনাট্যকার/ডিরেক্টর জুটি এরিক ব্রেস ও জে.এম. গ্রাবার। কথা প্রসঙ্গে, তাদের চিত্রনাট্যের পোর্টফোলিওর ঝুলিতে আছে ফাইনাল ডেস্টিনেশন ২, সেই ... 'ম্যাজিকেল রিয়েলিজম' জাতীয় কিছু একটা এখানে আশা করা যেতে পারে। এখন ম্যাজিকেল রিয়েলিজম আবার টাইম ট্রাভেল থিওরি দুইটা ব্যাপার কি একসাথে যেতে পারে? পারবেনা কেন - কিন্তু লেখকরা দুইটি বিষয়ের কোনটিই পুরোপুরি প্রয়োগ করেননি বলেই মনে হয়। এজন্য চিন্তাশীল দর্শকরা বেশি চিন্তা করতে গেলে গল্পের বিশাল গর্তে (প্লটহোল) হারিয়ে যাবার সম্ভাবনা আছে। গল্পটাও বেশ এককেন্দ্রিক - বাটারফ্লাই ইফেক্টের প্রভাবটাও চরিত্রগুলোর বাইরে বিস্তৃত নয়, যেটা বেশ হতাশাজনক, যেখানে অন্যান্য অনেক টাইম ট্রাভেল রিলেটেড সিনেমাগুলো এই 'বাটারফ্লাই ইফেক্ট' এর ব্যাপারটা বা এ বিষয়টিকে তুলে না ধরাটাকেও সুচারুভাবে সামাল দিয়েছে।

তবে এসব বিষয় মাথায় না রেখে বেশ ইন্টেরেস্ট নিয়ে সিনেমাটি দেখতে পারা যায়। তখন উঠে আসে আমার অন্যান্য 'পেট পিভ' - ক্যামেরার কাজগুলো দেখলে বেশিরভাগ সময় ২০০০ এর প্রথম দিকের 'কর্নি' টিনেজার মুভির কথা মনে হতে থাকে মাঝে মাঝে। আরো বেশি মনে করিয়ে দেওয়ার জন্য রয়েছে অওকওয়ার্ড গ্রাফিক্সের কাজ, যেগুলো না থাকলে আরো বেশি ভালো লাগতো। সিনেমার আরো কিছু দিক (যেমন ঠুশঠাশ করে সারাজীবনের স্মৃতি ফিরে আসা) ব্যাপারটাকে ফ্ল্যাশব্যাক (কিউ আরও কিছু বিরক্তিকর ভিএফেক্স)-এ না দেখালে পরের অংশগুলোতে আরো বেশি জানার আগ্রহ তৈরি হতো বলেই আমার মত। যদিও কাহিনী একসময় প্রেডিক্টেবিলিটির ধাঁচের মধ্যে পড়ে যায়। বিশেষ করে সিনেমার মাঝে যখন ইভান এক ভাগ্যবিষারদের কাছে যায় এবং সে বলে এক রহস্যময় কথা। দেখে সাথে সাথে আমার আরেকটি সিনেমার কথা মনে পড়ে গিয়েছিল (স্পয়লার না দেওয়ার স্বার্থে সিনেমাটির নাম উহ্য থাকলো) এবং তারপর শেষটা কেমন হবে তা বোঝা হয়ে গিয়েছিল।




কাহিনীর লজিক্যাল দিকগুলো ছাড়াও ইমোশনাল দিকগুলো ( ইভান ও  তার বান্ধবী কেইলির জীবনের ট্রমাগুলো ) একের পর একটা দেখা যায় - ব্যাপারগুলো যেভাবে প্রভাব ফেলার উদ্দেশ্য অতটা প্রভাবিত করতে পারেনি। হয়তো খড়খড়ে ডায়ালগের কারণে। অনেকেই এখানে ইভান হিসেবে অভিনেতা অ্যাশটন কুচারকে দোষ দিয়ে থাকেন। যদিও আমার কাছে তাকে নিম্নমানের মনে হয়নি, বিশেষ করে সিনেমার কিছু কমিক রিলিফ মূহুর্তগুলোতে তিনি সেরা, বাকি দৃশ্যগুলোতে এক্সপ্রেশনের অভাব অনেক সময় বিরক্তি সৃষ্টি করতে পারে, অনেক সময় চোখে পড়েনা। সিনেমাটির অপর প্রধান চরিত্র হিসেবে এমি স্মার্ট এক কথায় অসাধারণ। আমি তার বিশেষ ভক্ত না, কিন্তু মাঝেমধ্য-খাপছাড়া ডায়ালগগুলোও তার কণ্ঠ আর এক্সপ্রেশনে স্বচ্ছন্দ।

সিনেমার একটা উল্লেখযোগ্য বিষয় দেখা যায় যে মূলতঃ কেউ-ই হয়তো খারাপ নয়, পরিস্থিতির কারণে তারা একেকভাবে বেড়ে উঠে। এই গ্রেই মোরালিটির ব্যাপারটাকে কে কত স্পষ্টভাবে দেখবেন তা বোধগম্য নয় - দলা পাকানো কাহিনীর মধ্যে এই উদ্দেশ্যটা হারিয়ে যায় অনেকের কাছে।

 

মোটামুটি এক বোরিং সন্ধ্যায় বসে বা গ্রুপের সাথে মেইন্সট্রিম ধাঁচের 'আগে দেখিনি তো!' এরকম একটা সিনেমার খোঁজে এটা দেখা যেতে পারে, যদি আগে দেখা না হয়ে থাকে আর কি। সিনেমাটি আবার দেখবো বলে মনে হয়না। তবে বলে রাখা ভালো সিনেমাটিতে যদিও অনেক শিশু কিশোর আছে ( হ্যা ঐ সাইকোপ্যাথিক বাচ্চাটা লোগান লারম্যান ) তবে বেশ কিছু ডার্ক থিম দেখানো হয়েছে, বাচ্চাকাচ্চাদের সাথে দেখতে মানা রইলো। 

বিদ্রঃ ডার্ট ফার্মার কি? (হাসি)


Comments

Popular posts from this blog

The Eyes of My Mother: নারী, প্রকৃতি, বিচ্ছিন্নতা

রিভিউঃ Sala samobójców (2011)

চাইনিজ জেসমিন টি