The Eyes of My Mother: নারী, প্রকৃতি, বিচ্ছিন্নতা

[ major spoilers ]

আর্টের একটি জটিল আলোচনা হচ্ছে বিচ্ছিন্নতা, বা আইসোলেশন। কখনো বিচ্ছিন্নতায় যেতে বাধ্য করা হয় সমাজ দ্বারা, কখনো কেউ একাকীত্বের সাথে খাপ খাইয়ে নেয় যে সামাজিকতা হিস্টিরিয়া তৈরি করতে পারে। আইসোলেশন, বা লোনলিনেস ব্যাপারটা প্রথমে খেয়াল করেছিলেন ফ্রয়েড, যদিও সেটি তিনি সরাসরি টার্ম করেননি। বিচ্ছিন্নতাকে তিনি তুলে ধরেছিলেন অ্যাংক্সাইটির সাথে খাপ খাইয়ে নেয়ার জন্য একটি সেলফ-ডিফেন্স মেকানিজম হিসেবে। তবে সেখানে তার টেস্ট সাব্জেক্টটি মানুষের সঙ্গ পাওয়ার মাধ্যমে অন্ধকারের প্রতি তার ভয় কমে যাওয়ার কথা বলেছিল। তাহলে কি একাকীত্বের বিপরীত শুধু মানুষের সঙ্গ? 


উল্লেখিত টেস্ট সাব্জেক্টটি 'ম্যাডোনা অ্যান্ড চাইল্ড' এর একটি পেইন্টিং থেকে সে যে আনন্দ পেয়েছিল, তার বর্ণনা থেকে প্রখ্যাত সাইকোঅ্যানালিস্ট ক্লাইন এই সিদ্ধান্তে আসেন যে, 'একাকীত্ব' হলো মা ও সন্তানের আদর্শ ভালোবাসার সম্পর্কটির প্রতি আকাঙ্ক্ষা । বার্গম্যান বলেন যে, আদর্শ ভালোবাসার মূল বিষয় হলো শিশুকালের সেই হারানো ভালোবাসাকে ফিরে পাওয়া। তাহলে একাকীত্বের বিপরীত কি ভালোবাসা, বা আরেকটু স্পেসিফিক্যালি, মায়ের ভালোবাসা?


নিকোলাস পেশে'র গল্প ও ডিরেকশনে তার ডেব্যু ফিল্ম The Eyes of My Mother (২০১৬) নিয়ে আলোচনা করতে হলে এই থিমগুলোতে আলোকপাত করাটা প্রয়োজন। ফিল্মটি আর্টহাউজ ধাচের স্ল্যাশার ফিল্ম জনরাতে পড়লেও, মূলতঃ এর গল্প বলার ধরণ, বিশেষ করে এর প্রধান চরিত্রটির ডেভেলপমেন্টের জন্য সাধারণ স্ল্যাশার ফিল্ম থেকে এটি অন্যমাত্রা ধারণ করেছে, বললে ভুল হবেনা।

 ক্রিটিকরা এর কাজকে রোমান পোলান্সকি, ইঙ্গমার বার্গম্যান, ডেভিড লিঞ্চ বা আনা লিলি আমিরপুর এর কাজের সাথে তুলনা করেন। মূলতঃ এর সাদাকালো প্যালেটের জন্য একে Eraserhead (১৯৭৭), A Girl Walks Home Alone At Night (২০১৪) তুলনা করা চলে, যেগুলো নিজেরাও, বলা বাহুল্য, আর্টহাউজ হরর জনরার অন্তর্ভুক্ত। তবে আমার কাছে এগুলোর চেয়ে স্পিরিচুয়ালি সবচেয়ে বেশি কাছের মনে হয়েছে লার্স ভন ট্রিয়ারের Antichrist (২০০৯), এছাড়াও পোলান্সকির Repulsion (১৯৬৫) অনেকদিক থেকে এর কিছু কিছু বিষয় তুলে ধরে।


বলে নিতে হবে, সিনেমাটিতে ধর্মীয় সিম্বলিজম অনেক প্রভাবশালী। পরিবারটি, মূলতঃ ফ্রান্সিসকা ও তার মা ধার্মিক খ্রিস্টান। ফ্রান্সিসকাকে দেখা যায় খাওয়ার শুরুতে 'গ্রেইস' পড়ে নিতে। ফিল্মের শুরুতেই মায়ের কণ্ঠে আমরা শুনি সেইন্ট ফ্রান্সিসের মৃত্যুকালীন একটি গল্পঃ সেইন্ট ফ্রান্সিস বছরের পর বছর বনে একা কাটিয়ে দেয়ার পর একদিন একটি স্বপ্ন দেখতে পান, যেখানে একটি এঞ্জেল তার কাছে আবির্ভূত হয় আকাশে জ্বলন্ত অবস্থায়, এবং ঘুম থেকে উঠার পরে তিনি 'স্টিগ্মাটা'প্রাপ্ত হন - পরবর্তীতে চোখের একটি সমস্যায় মারা যান, যেই সমস্যাটি সাইকোসিস সৃষ্টিতেও দায়ী। উল্লেখ্য, স্টিগ্মাটা একটি ফেনোমেনন যেখানে কখনো কোন কোন খ্রিস্ট ধর্মাবলম্বীরা ব্যথার অনুভূতি বা কাঁটাছেড়া এক্সপিরিয়েন্স করেন এমন জায়গায়, যেসব জায়গায় আঘাত করে ক্রুশবিদ্ধ করা হয়েছিল যীশুখ্রিস্টকে। 

এছাড়াও সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যেই উক্তিটি ফ্রান্সিসকার মা বলে থাকেন, তা হলোঃ


'...loneliness can do strange things to the mind.' 

মজার ব্যাপার যে, গল্পটা বলাকালীন সময় ফ্রান্সিসকার আঙ্গুলের সংস্পর্শে আসে যীশুর মাথায় পড়ানো কণ্টকমুকুটের মত দেখতে একটি বাকলের, এবং তার আঙ্গুল থেকে রক্ত ঝড়ে পরে। 

যাইহোক, মায়ের সাথে তার সম্পর্ক বিশেষভাবে গভীর। বিভিন্ন ক্ষেত্রে আমরা দেখি তার মা-কে স্মরণ করতে; শেষদিকে মৃত মায়ের কাছে তার প্রার্থনার সময়ে মারিয়ার মূর্তি দেখা যায়; বলা যেতে পারে ফ্রান্সিসকার কাছে তার মা মারিয়ার পর্যায়ে স্থানান্বিত। এখানে আমরা ফিরে যেতে পারি সেই ফ্রয়েডের আলোচনাতে।


ইন ফ্যাক্ট, ঘটনাটি তখনই শুরু হয় যখন আগন্তুক চার্লি এসে হঠাৎ খুন করে ফ্রান্সিসকার মা-কে। আমরা দেখি অস্বাভাবিকভাবে শান্ত মেয়েকে। আটকে ফেলা চার্লি যখন জিজ্ঞেস করে যে সে তাকে মেরে ফেলবে কিনা, তখন সহজভাবে উত্তর দেয়, "কেন? তুমি তো আমার একমাত্র বন্ধু।"

পরবর্তীতে বিভিন্ন ক্ষেত্রে আমরা ফ্রান্সিসকার একমাত্র কনফিডান্ট হিসেবে দেখতে পাই তার মৃত মা-কেই। একমাত্র মা-কেই সে বলে তার আশা-ভরসা-ইচ্ছা-অসহায়ত্বের কথা। একমাত্র মা-ই তার বন্ধু হিসেবে পুরোটা সিনেমা জুড়ে ছিল। অর্থাৎ চার্লিকে বাঁচিয়ে রাখার একমাত্র কারণ ছিলো তার মায়ের বাহ্যিক অস্তিত্বটিকে সে চার্লির মাধ্যমে প্রতিস্থাপন করে। 
(যদিও এখানে উল্লেখ্য যে চার্লির সাথে তার সম্পর্কের রোলটি রিভার্সডঃ চার্লির মাথা সে কোলে রেখে তাকে খাওয়ায়। কিন্তু এখানে আরেকটি জিনিস চোখে পড়ে। এই খাওয়ানোর মধ্যে মমতা প্রকাশ পেলেও সে তাকে অগ্রাহ্য করে থাকে ঠিকই, মাঠ থেকে আগাছা, মরা ইঁদুর ইত্যাদি হয় তার খাবার।) 


এরকম আনব্যালেন্সড ভালোবাসার একটি কারন খুবই স্পষ্টভাবে দেখা যায়। ফিল্মের যে কয়টি সীন-এ ফ্রান্সিসকাকে তার বাবার সাথে দেখা যায়, সেখানে তার অস্তিত্বের প্রতি তার বাবার রিস্পন্স অতি সামান্য। বরঞ্চ যে ইন্টার‍্যাকশনগুলো দেখা যায়, তা শুধু তার বাবার ঘুম এবং মৃত্যু পরবর্তী সময়। তার বাবাকে কাছে পাওয়ার জন্যই হয়তো সে নিজেই তার বাবাকে খুন করে (যা সে নিজেই স্বীকার করে)।

বাবার মৃত্যুর পর ফ্রান্সিসকা বাসায় আনে কিমিকোকে। যখন সে আঁচ করতে পারে কিমিকো তাকে ছেড়ে চলে যেতে পারে (পালিয়ে যেতে পারে) তখন সে খুন করে তাকেও। আর এটিই হয়তো ভালোবাসার প্রতি আকাঙ্ক্ষার জন্য মানুষ কোন পর্যন্ত যেতে পারে তার নমুনা। 


এখানে উল্লেখযোগ্য, আমরা ফ্রান্সিসকার যেসকল কাজ দেখি যা ফিজিক্যাল ইন্টিমেসির দিকে নির্দেশ করে (কিমিকো ও চার্লির ক্ষেত্রে), সেগুলো বলা যাবেনা যে তার ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ, বরং ভালোবাসা সৃষ্টি করার একটি মাধ্যম। যদিও ফ্রান্সিসকা তার মায়ের প্রতি অনুভূত ভালোবাসাটি তাদের ক্ষেত্রে অনুভব করেনি, কিন্তু তাদেরকে ছেড়ে যেতে দেওয়ার মানে তার একাকীত্বকে মেনে নেওয়া, যা তার পক্ষে সম্ভব নয়।   

এসবকিছুরই অবসান হয় যখন সে পায় শিশু অ্যান্টোনিওকে -তখনই তার প্রকৃত মানবিক ভালোবাসা প্রকাশের সুযোগ পায় ফ্রান্সিসকা। এমনকি সে তাকে ঘুণাক্ষরেও জানতে দেয়না তার পাশবিক প্রকৃতির কথা। নিজের ছেলের মত মানুষ করে তাকে। একমাত্র এই পর্যায়ে তাকে দেখা যায় তার মায়ের কঙ্কাল খুঁড়ে বের করতে অবশেষে। তার মা ও অ্যান্টোনিওকে নিয়ে এক পরিবার গড়ার আশা নিয়ে দুঃখ প্রকাশ করতে। অবশেষে তার মা-কে বলতে, সে তাকে মিস করে। সে পেয়েছে তার ভালোবাসার বস্তুকে, যাকে সে তার মায়ের মতোই ভালোবাসে। 


ট্র্যাডিশনাল জেন্ডার রোল ইত্যাদি প্রশ্ন নিয়ে এখন আপাতত যাবোনা, তবে চিরকাল নারীর একটা রিপ্রেসেন্টেশনের দিকে তাকাবোঃ মাতৃত্ববোধ। নারীর এই পৃথিবীর সাথে বস্তুগত বন্ধন। একারণেই হয়তো ইঙ্গমার বার্গম্যানের Persona (১৯৬৬) তে আমরা দেখতে পাই, ইসাবেল পৃথিবী নামক এই ইল্যুশনকে পরিত্যাগ করার আরেকটি অংশ হিসেবে ছিড়ে ফেলে তার সন্তানের ছবি (আরও অনেক ব্যাপার এর সাথে আলোচনা করা যাবে, তবে সেটি আরেক দিনের কথা)। 

এন্টিক্রাইস্টের মূল উপজীব্যই প্রকৃতিকেন্দ্রিক - যদিও সেখানে প্রকৃতিকে ক্ষমতাধর দেখানো হয়েছে। অন্যদিকে, আইজ অফ মাই মাদার এ প্রকৃতি ফ্রান্সিসকার জন্য শান্তি ও নিরাপত্তার প্রতীক। যদিও ফিল্মটির বেশিরভাগ দেখা যায় ইন্ডোর সেটিং-এ, কিন্তু ঘর সংলগ্ন বনের মধ্যেই তাকে দেখা যায় যেতে, তার মায়ের সাথে কথা বলার জন্য, আকুতির কথা জানাতে, কষ্টের কথা জানাতে। সেখানে গিয়ে সে বলতে পারে, "জানি মা, তুমি আছো আমার সাথে।"  


কথাপ্রসঙ্গে, ইন্ডোরের উপর প্রাধান্য 'রিপালশন' ফিল্মের ক্যারোলের কথা মনে করিয়ে দেয়ঃ সে-ও তার ঘরে সবচেয়ে বেশি স্বাচ্ছন্দ্যে ছিল, এবং যে কাজগুলো তার পক্ষে করা সম্ভব নয় তাও সে করতে পেরেছিল, এই সিনেমাটিতেও একই। যখন অ্যান্টোনিওর মা বাসা থেকে পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়, তখন ফ্রান্সিসকা অসাধ্য সমস্যার মুখোমুখি হয়। তাকেও আমরা ঘর, খোঁয়ারঘর ও সংলগ্ন বনের বাহিরে যেতে দেখিনা, শুধুমাত্র দুইবার ছাড়া। 

উল্লেখযোগ্য যে, সেন্ট ফ্রান্সিস খ্রিস্টধর্মে পশুপাখিদের প্যাট্রন সেইন্ট হিসেবে সম্মানিত। পশুদের প্রতি ফ্রান্সিসকার মমত্ববোধের কিছুটা প্রকাশ পায় তার পরিণত বয়সের একটা সীন-এ, যখন সে তার গরুদের আপেল খাওয়াতে চেষ্টা করে, যদিও আমরা দেখতে পাই গরুগুলো তার কাছ থেকে দূরে সরে যাচ্ছে। মানুষের সাথে তার সম্পর্কগুলোও যেন এমনই; 

যা নিয়ে আসে আরেকটি পয়েন্টেঃ আমরা দেখি তার মা একজন সার্জন, যিনি পর্তুগিজ ট্র্যাডিশনাল সার্জারিতে শিক্ষানবিশ গ্রহণ করেছেন, বিশেষ করে চোখ বিষয়ে। সেখানে ট্রেইনিদের প্র্যাক্টিস করতে হয় গরুর উপর।  গরুর চোখ আর মানুষের চোখের মধ্যে কোন পার্থক্য নেই - শুধু গরুর চোখগুলো আকারে বড়, এই - বলেন সেই মা। এই দর্শন যেন ফ্রান্সিসকাও গ্রহণ করেছে। তাই তাদের খোঁয়ারঘরে তার ভিক্টিমদের একইভাবে চোখ তুলে নিয়ে চেইনে আটকাতে বাঁধেনা, এবং সে তাদের সবার প্রতিই যত্নশীল। 


যাইহোক, যেমন বার্গম্যানের Persona তে সেই ফিল্মটির ভিসুয়াল এবং কাহিনীগত ড্রাইভিং পয়েন্ট ছিলো 'হাত', তেমনি কাহিনীটির ড্রাইভিং পয়েন্ট হিসেবে খুবই গুরুত্বপূর্ণ ইলিমেন্ট হলো চোখ। তবে তা শুধুই গল্পটির অংশ, ভিসুয়াল ন্যারেটিভে এটি কোন ভূমিকা রাখেনি - তবে এটি ফিল্মটির একটি প্লাস পয়েন্ট। কালোসাদা প্যালেট এবং প্রতিটি সীনকে সিম্বোলিজমের বাহুল্য থেকে মুক্ত করে দেওয়ার মাধ্যমে আমাদের দৃষ্টি আসল কাহিনীতে ডুবে থাকতে এবং মানুষ হিসেবে ফ্রান্সিসকাকে দেখতে সাহায্য করে - এখানে সিনেমাটোগ্রাফার জ্যাক কুপারস্টাইনের অসামান্য ক্রেডিট।  

নিকোলাসের গল্প বলার ধরণে ভন ট্রিয়ারের ছাপ পাওয়া যায়ঃ উপন্যাসের মতন সিনেমাটি একাধিক চ্যাপ্টারে বিভক্ত। কিন্তু সিনেমাটির এগিয়ে যাওয়ার ধারাটি অনেক কাব্যিক যে কারণে অনেক ক্রিটিক একে 'অ্যালেগরিক্যাল' বলে থাকেন। উল্লেখযোগ্য একটি দিক হলো, ফ্রান্সিসকার খুন করার দৃশ্য কখনোই সরাসরি দেখানো হয়না, সেগুলোর প্রভাব আমরা দেখতে পাই ফলাফল হিসেবে। এভাবে ডিরেক্টর আমাদের কল্পনাতেই একটা বিভীষিকাময় সীন দেখিয়ে দেনঃ শো-ডোন্ট-টেলের অসামান্য ব্যবহার (এর বিপরীত ব্যবহার কিন্তু একই রকম রেজাল্ট আমরা দেখতে পাই 'পার্সোনা' সিনেমাটির 'টেল-ডোন্ট-শোও' অ্যাপ্রোচে)।

সিনেমাটিতে বিশেষভাবে অনেক কম্পোজিশনে এক্সট্রিম লং-শটের ব্যবহার, এবং অনেক আমেরিকান শট (৩/৪) বা এক-চরিত্র শটগুলো এমন অ্যাঙ্গেল থেকে করা হয়েছে যে পরিবেশের পরিধি বেশ বড় মনে হয় - এভাবে শুন্যতার আমেজ আরো স্পষ্টভাবে অনুভব করা যায়।    

=

বিবিধ সিম্বলিজম ও রেফারেন্সঃ

 এই ফিল্মটির মধ্যে একাধিক সিম্বলিজমের মধ্যে একটি প্রথমেই চোখে পড়ে তা হলো গ্র্যান্ট উডের পেইন্টিং 'অ্যামেরিকান গথিক' (১৯৩০)। মূল চরিত্র ফ্রান্সিসকার বাবা মা দুইজনই যেন পেইন্টিং এর দুইটি চরিত্রের মতো; দৈহিকভাবে দুইজনই কৃশকায়, যদিও তার মা ছবিটির স্বর্ণকেশী মহিলাটির মতন নন বরং একজন পর্তুগীজ ইমিগ্র্যান্ট, কিন্তু তার বাবা ছবিটির পুরুষ চিত্রায়ণটির অবলীল কপিঃ চশমা পরিহিত এবং প্রায় টাকপড়ে যাওয়া এক বৃদ্ধ। এছাড়াও উল্লেখিত পেইন্টিং-এ দেখা যায় লোকটির হাতে একটি পিচফর্ক, যা নির্দেশ করে একটি গ্রামীণ পশুপালক পরিবার (যেহেতু পিচফর্ক দিয়ে খড় ছাড়ানো হয়), এবং ব্যাকগ্রাউন্ডে একটি বার্নহাউজ দেখা যায়, ফিল্মটির পরিবারের ক্ষেত্রেও তা একই।

ফিল্মটির শুরুই হয় গল্পের মাঝখান থেকে (যদিও আমরা সেটা প্রথমে ধরতে পারিনা) এভাবে সূক্ষ্মভাবে ফ্ল্যাশব্যাকের ব্যবহার ঘটানোর মাধ্যমে একটি রেফারেন্স প্রকাশিত হয়। সিনেমাটির শুরুতে ট্রাকড্রাইভারের স্টেরিওতে বাঁজা গানটি হলো ক্যারোলিনা বাডিস এর 'দি মার্ডার অফ দি লওসন ফ্যামিলি' - যা একটি সত্যি কাহিনীর উপর ভিত্তি করে লেখা। সেই কাহিনীতে নিজের পরিবারকে খুন করা লোকটির নাম ছিল চার্লি লওসন।  


ফ্রান্সিসকাদের ঘরে টেলিভিশনে সবসময় একটি শো-ই চলতে দেখা যায়। এটি হলো 'Bonanza', ষাটের দশকে চলা ১৪ সিজনের একটি শো। সিনেমায় শুধুমাত্র সিজন-০১ এপিসোড-২৬ দেখানো হয়, যার টাইটেল 'দি অ্যাভেঞ্জার'। উল্লেখ্য যে, ছবির সেকেন্ড পার্টের পরে (যখন চার্লি মারা যায়) সিনেমায় এটি আর দেখানো হয়না। 

ফ্রান্সিসকা যেই গানটিতে নাচে, তা আমালিয়া রড্রিগেজ এর কণ্ঠে 'নাউফ্রাখিও' যার অর্থ Shipwreck। গানটিতে গায়ক বলেন তার স্বপ্ন এক তরীতে রাখার কথা, যে তরীটি ভেঙে গিয়েছে - এখন তিনি অপেক্ষা করেন তরীটি যেন নিরাপদে চলে যায় সমুদ্রের তলদেশে। গানটি বেজেছে সেসকল সীনগুলোতে ফ্রানসিসকার সবচেয়ে বেশি মানবিক দিকগুলো প্রকাশ পায় - যে, যে কেউ তার প্রতি সিম্প্যাথাইজ করতে বাধ্য।

 

ফিল্মটির আরেকটি দিক হলো এর 'আমেরিকানা' ঘরানার '৬০ এর দশকের থিমঃ টেলিভিশন, পোশাক আশাক, কিন্তু সেই সাথে মডার্ন কিছু থিমও দেখা যায় (নতুন মিউজিক, কিমিকোর আগমন) যেই কারণে ফিল্মটিকে ঠিক কোন নির্দিষ্ট পিরিওডে ফেলা যায়না (একটা লিঞ্চিয়ান বৈশিষ্ট্য, এখানে লিঞ্চের Mulholland Drive (২০০১) ও  Inland Empire (২০০৬) এর কথা মনে পড়ছে)।

ফ্রান্সিসকা তার ছেলেকে শেষরাতে যে কবিতাটি শুনায় তা ম্যাক্স এরমান্‌ এর গদ্য ছন্দে লেখা কবিতা 'ডেসিডেরাটা' যার ল্যাটিন থেকে অনুবাদ করলে দাঁড়ায় 'আকাঙ্ক্ষিত জিনিসগুলো'।  

  

Comments

Popular posts from this blog

রিভিউঃ Sala samobójców (2011)

চাইনিজ জেসমিন টি