The Virgin Suicides: রঙিন চশমা
[ minor spoilers ]
সোফিয়া কপোলার হাতে 'দ্য ভার্জিন সুইসাইডস' এর একটি কপি আসার পর তিনি চিন্তা করেছিলেন এটা নিয়ে বানিয়ে ফেলবেন একটি ফিল্ম। তারপর এসে পড়ে The Virgin Suicides (১৯৯৯)। অন্যদিকে, জেফ্রি ইউজিনিডিসের ১৯৯৩ নভেল 'দ্য ভার্জিন সুইসাইডস' একটা মিক্সড রিঅ্যাকশন নভেলঃ কেউ একে ভালোবাসে, আবার কেউ একে মনেপ্রাণে ঘৃণা করে। নভেল নিয়ে যেই মতামতই হোক, কপোলার ফিচার ফিল্মটি নিঃসন্দেহে তার অন্যতম মাস্টারপিস, যার অ্যাস্থেটিকগুলো এখনো সত্তর/আশি দশকের থিমের ফিল্মমেকারদের অনুপ্রাণিত করে।
বই অ্যাডাপশন হিসেবে সিনেমাটি যথেষ্ট অনুগত - সিনেমার ন্যারেশনেও বইটির ফার্স্ট পার্সন প্লুরাল কণ্ঠ ব্যবহৃত হয়েছে, যার জন্য অনেকে এটিকে গ্রিক কোরাস বলে থাকেন (উল্লেখ্যঃ গ্রিক কোরাস ব্যাপারটা হলো একদল মুখোশধারী পার্ফরমার যারা একস্বরে এক চরিত্র হয়ে কথা বলে কোন একটি ড্রামাটিক ঘটনা নিয়ে। গ্রিক নাটক থেকে অনুপ্রাণিত)। যদিও লেখক মজা করে বলেন, আমার নাম ইউজিনিডিস না হলে এটাকে কেউ গ্রিক কোরাস বলতোনা।
যাইহোক, এই নামহীন বক্তা একদল ছেলের পক্ষে কথা বলেন, যারা বড় হয়ে নিজেদের পরিবার নিয়ে জীবন পার করে যাওয়া সত্ত্বেও কখনো ভুলতে পারেনা তাদের টিনেজ বয়সের একটি ট্র্যাজেডির কথাঃ লিসবন পরিবারের মেয়েদের আত্মহত্যা।
প্রথমতঃ লিসবন বোনরা সবাই-ই সুইসাইড করে; ব্যাপারটি সিনেমার নাম থেকেই কিছুটা বোধগম্য; যেটা বোঝা যায়না সেটি হলো তাদের কারণগুলো। যদিও সাদা চোখে বলে দেয়া যায় - হ্যা, তাদের বাবা মায়ের কড়া শাসনের বেঁড়াজালে বন্দি হয়ে তাদের যে দমবন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়, তা থেকে মুক্তি পেতে একে একে বিদায় নেয় সেসিলিয়া, বনি, মেরি, টেরিস ও লাক্স। অথচ কেউ দোষ দেয়না তাদের বাবা-মাকে। তাদের মা-ও বলেন - ঘরে তাদের ভালোবাসার কমতি ছিলোনা। ঘরভর্তি ছিলো শুধুই ভালোবাসা।
এখানে রোনাল্ড লিসবন বোনদের স্কুলেই একজন অংক শিক্ষকঃ তিনি মৃদুভাষী কিন্তু কঠোর মানসিকতার না - আমরা দেখতে পাই যে সেসিলিয়ার মৃত্যুর পর ফাদার মুডি তার সাথে কথা বলতে আসলে তিনি ফুটবল নিয়েই কথা বলতে থাকেন বিষয়টিকে এড়িয়ে যাওয়ার জন্য, আবার স্কুলে এসে কথা বলতে থাকেন গাছগুলোর সাথে, তার মেয়েদের জন্য পার্টির ব্যবস্থা করলে স্বযত্নে বেলুন লাগাতে থাকের সিড়ির রেইলিং-এ। পক্ষান্তরে, মিসেস লিসবনের বেশ কড়া ও মধ্যে নিউরটিক ব্যবহার দেখা যায়ঃ ঘরে যেন স্ট্রিক্ট খ্রিশ্চান নিয়ম-কানুন বজায় থাকে সেই চেষ্টায় থাকেন তিনি; সত্যি বলতে, তার মেয়েদের বড় হয়ে যেতে থাকা এবং নারীত্বের পূর্ণতা পাওয়ার ব্যাপারটি তিনি সহজভাবে মেনে নিতে পারেননা - এর দৃষ্টান্ত দেখা যায় যখন প্রমের জন্য তিনি মেয়েদের জন্য নিজেই বানিয়ে দেন ঢিলেঢালা পা-পর্যন্ত দৈর্ঘ্যের সাদা পোশাক (যাকে বক্তা একইরকম দেখতে অনেকগুলো ছালা বলে চিহ্নিত করে)। আসলে, এই মনোভাব কিন্তু দেখা যায় অনেক বাবা-মা এর মধ্যেই।
ফিল্মটি শুরু হয় এয়ার ব্যান্ডের সিন্থ-সৃষ্ট স্বপ্নীল মিউজিক দিয়ে - হঠাৎ করে থেমে যায় যখন আমরা দেখি বাথরুমে সেসিলিয়ার নিথর দেহ। তাকে নিয়ে যাওয়া হয়, ক্যামেরা আসে ঘরের বাইরে, আবার শুরু হয় মিউজিক, যেন কিছুই হয়নি। আর সিনেমাজুড়ে পরিবেশটা এমনই। মফস্বল বা সাবার্বান এলাকায় যেকোন ঘটনা, তা যত বড়ই হোক না কেন, শুধুই একটা ঘটনা, যা কিছুদিন গল্প-গুজব ও গসিপের উদ্রেক করে, এরপর মিলিয়ে যায়। আবার, সুইসাইড চেষ্টা থেকে বেঁচে যাওয়া সেসিলিয়াকে যখন ডাক্তার জিজ্ঞেস বলেন, তুমি তো এখনো জীবনের কষ্ট কি তা বোঝার মতও বড় হওনি - তখন সে বলে সেই মনে রাখার মত লাইনটি।
এবং বাস্তবিকও তাই - তারা, বা আরো স্পেসিফিক্যালি প্রধান চরিত্র তাদের সমবয়সী ছেলেগুলো তের বছর, অর্থাৎ কিশোরী মেয়েদের মানসিকতা বুঝতে পারেনা। বোঝার জন্য তাদের সেই তের বছরের মেয়ে হওয়ার কিছু চেষ্টা দেখতে পাই যখন তারা সেসিলিয়ার জার্নাল পড়ে চিন্তা করতে থাকে তার দৃষ্টিতে লিসবন বোনদের জীবন কেমন; বিশ্লেষণ করতে থাকে তার i ও t - (সাইকোলজিক্যালি তাকে অনুধাবন করার চেষ্টা)। যোগার করে তাদের ছবি, তাদের অর্ডার করা ট্রাভেল ব্রোশিউর। মনে মনে তাদের সাথে ঘুরে বেড়ায় দেশে দেশে - কিন্তু সামনা সামনি কথা বলা হয়না, যদিও তাদের মধ্যকার দূরত্ব খুবই কম। এভাবে ছেলেগুলো তাদের মানসিক বিভেদ দিয়ে লিসবন বোনদের করে রেখেছে রহস্যময়।
মূলতঃ টিনেজ মেয়েদেরকে যে 'রহস্যময়ী' মনে করার মিথ তা-ই দেখা যায় সিনেমাটিতেঃ যেটি আসলে দেখা হয়েছে সেই এলাকার ছেলেগুলোর দৃষ্টিভঙ্গি থেকে। এজন্য সিনেমাটিতে সফট প্যাস্টেল ধাচের রং চোখে পড়ে সবসময়, এমনকি যখন লিসবনদের বাসার কিছু সামান্য দৃশ্য আছে, সেগুলোতেও।
আবার কিছু দৃশ্য দেখা যায় টেলিস্কোপের মাধ্যমেঃ সেখানেও তাদেরকে আদর্শে পরিণত করার চেষ্টা - যাদের সাথে লাক্সকে দেখা যায় তাদেরকে তারা সৌভাগ্যবান বলে, কিন্তু কখনও চেষ্টা করেনা তাদের সাহায্যের জন্য কিছু করতে, বা তাদেরকে জিজ্ঞেস করতে তাদের সমস্যার ব্যাপারে। প্রায় একসপ্তাহ লাগে শুধু তাদের ফোন দিতে - এরপরেও কমিউনিকেশন হয় শুধু রেকর্ডের মাধ্যমে।
তাদের কল্পনাতেই তারা সবচেয়ে বেশি কাছে লিসবনদের। সবচেয়ে কাছে আসতে পারে শুধু ট্রিপ ফন্টেইন, যে আকর্ষিত হয় লাক্সের প্রতিঃ পার্ফেক্ট লিসবন বোনদের মধ্যে সবচেয়ে পার্ফেক্ট। এমনকি যখন লাক্স তাকে পাত্তা দেয়না তখন মেয়েদের মধ্যে পপিউলার ট্রিপকে দেখি দুর্দশাগ্রস্থ হয়ে যেতে; চাইলে অন্য যে কোন মেয়েকে প্রমে নিয়ে যেতে পারলেও শুধু লাক্সকে নিয়ে যাওয়ার জন্য কাঠ-খড় পোঁড়াতে। অবশেষে সে নিয়ে যেতে পারে লাক্সকে, এবং প্রম শেষে রাতে তাকে বাসায় না যেতে উদ্বুদ্ধ করে। যদিও সকাল হওয়ার আগেই সে চলে যায় লাক্সকে রেখে, চিন্তাও করেনা কিভাবে সে বাসায় ফিরতে পারে বা বাসায় ফেরার পরেও তার কপালে কি অপেক্ষা করছে।
যে ট্রিপের কাছে লাক্স ছিল 'স্টিল পয়েন্ট অফ আ টার্নিং ওয়ার্ল্ড', সে-ই বলে যে তার প্রতি তার ছিল অসামান্য ভালোবাসা, কিন্তু ঘাসের মধ্যে ঘুমিয়ে থাকা লাক্সকে দেখে তার স্বপ্ন ভেঙে যায়; কারণ লাক্স ছিল তার কাছে একটি ফ্যান্টাসি। আসল মানুষকে ভালোবাসার যেই দায়িত্ববোধ, মানুষটির যেই ইম্পার্ফেকশন - সেটি ধারণ করার মত ক্ষমতা ছিলনা ট্রিপের। কিন্তু তার স্বপ্নের মানুষটিকে যে সে হাতের কাছে পেয়েছে - তাই ছিল তার কাছে অনেক বেশি; যে কারণে সে বলেঃ "অন্তত আমি এরকম ভালোবাসার স্বাদ নিতে পেরেছি। কতজনই বা বলতে পারবে তারা পেরেছে এই জীবনে?"
তারপরও সে ছিল শুধুই কল্পনার বস্তু।
লিসবনদের অন্যান্য ব্যাপারগুলোও দেখা যায় টেলিভিশনের মাধ্যমে (এবং অতিরঞ্জিতভাবে) - এছাড়াও তাদের কোন ব্যাপারে নিউজ রিপোর্টারকে দেখি সেসিলিয়ার মৃত্যুকে মনে করিয়ে দিতে। আবার যখন রোনাল্ড স্কুল থেকে চাকরীচ্যুত হয় - তাও আমরা শুনতে পাই এলাকার মহিলাদের গসিপের মাধ্যমে। তাদের মারা যাওয়ার পর যখন তাদের বাবা-মা এলাকাটি ছেড়ে চলে যায় তখন একজন পার্টি দেয় যার থিম ছিল অ্যাসফিক্সিয়েশন ('শ্বাসরোধ'), যেটা কিছুটা এই সুইসাইডকে ব্যঙ্গ করে বলেই মনে হতে বাধ্যঃ বিশেষ করে যখন পার্টির মাঝখানে একজন হঠাৎ করে পানিতে ঝাপ দেয় এবং তাকে তোলার সময়ে বলতে থাকে, "না তুমি আমাকে বুঝোনা, আমি টিনেজার, আমার অনেক সমস্যা"। বক্তাও একপর্যায়ে বলেন কিভাবে তাদের স্মৃতি থেকে মুছে যাচ্ছে তাদের চেহারা, কিন্তু শুধু মনে আছে ঘটনাটিই।
সিনেমাটিতে দুইবার দেখা যায় মেরির ছবি সম্বলিত কার্ডটি, যিনি একজন ভার্জিন ছিলেন এবং তার কন্ট্রোলের বাহিরে ঘটে তার জীবনের বিভিন্ন ঘটনা। এক পর্যায়ে লিসবনদের বাসার সামনে গাছটি কাটতে উদ্যত হলে বোনরা কাটতে বাঁধা দেয়। এটি হতে পারে সেসিলিয়ার স্মৃতি আঁকড়ে রাখার চেষ্টা (কারণ এক পর্যায়ে আমরা দেখি সেসিলিয়াকে গাছের উপর, যার কারণে ধারণা হয় যে সে গাছে চড়তো প্রায়ই) - আবার হতে পারে সেই সিম্বলিজমকে ধরে রাখার চেষ্টা যে গাছটি মৃত নয় এখনও, কিন্তু মৃতপ্রায় - তাদের মতন।
আর বোনদের মৃত্যুর উপায় নিয়ে অনেক কিছু বলা যায় তাদের সম্পর্কে - তবে সবচেয়ে মনে থাকে লাক্সেরই মৃত্যু - যে মারা গিয়েছে সিগারেট হাতে, অনেকটা রেবেলিয়াসভাবে। বোনদের মধ্যে সে-ই ছিল সবচেয়ে বেশি বিদ্রোহী; সে রক গান শুনতো (যা তার মা পছন্দ করতোনা)। এবং শুধু তার বাবামা পছন্দ করতোনা বলেই হয়তো সে ছেলেদের সাথে মিশতো, বা ট্রিপের সাথে রাতে থেকে যেতে বেশি চিন্তা করেনি।
যদিও শেষের দিকে তাদের মৃত্যুকে বক্তা 'স্বার্থপর' বলে থাকেন, কিন্তু ঠিকই প্রকাশ পায় তাদের প্রতি অ্যাডমায়ারেশন - যেখানে টেরিস, মেরি, বনি, লাক্স ও সেসিলিয়া নিজেদেরকে নিয়ে চিন্তা করেছে, পৃথিবীকে নিয়ে চিন্তা করেছে; যেই পৃথিবীটা নিজেদের নিয়ন্ত্রণে সেখানে তাদের ভাগ্যকে নিজেদের হাতে নেওয়ার মত দুঃসাহস দেখিয়েছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তারা ছিল অবসেশনের বস্তু - আর অবসেশনের বিষয়টি নিয়ে দুঃখ আসেনা, শুধুই কৌতুহল আর স্মৃতিচারণ।
মূলতঃ সিনেমাটিতে কপোলা দেখাতে চাননি ঠিক কেন লিসবন মেয়েরা মৃত্যুর পথ বেঁছে নিয়েছিল। বরং টিনেজ আকর্ষনের রঙিন চশমা দিয়ে দেখাতে চেয়েছেন একদল স্বপ্নচারী মেয়েকে। এবং মেয়েদের রহস্যময়তাকে - যা মূলতঃ সৃষ্টি সে কিশোর ছেলেদের, যারা মেয়েদের আইডোলাইজ করতে পছন্দ করে, কিন্তু তাদের সমান মনে করতে পারেনা।
'ভার্জিন সুইসাইডস' এর আরেকটি চমৎকার বিষয় হল এর সাউন্ডট্র্যাক যার ক্রেডিট এয়ার ব্যান্ডটির - নিকোলাস গোডিন বলেছিলেন যে এটি তৈরির সময়ে তিনি জ্বরের মধ্যে ছিলেন এবং জ্বরের ঘোরের ভাবটি অনেকটাই পাওয়া যায়। এছাড়া তিনি ইন্সপায়ারেশন হিসেবে নিয়েছেন তার টিনেজ সময়কে - যাকে তিনি বলেছিলেন তার জীবনের সবচেয়ে খারাপ সময় হিসেবেঃ তখন তুমি যে মেয়েটিকে পছন্দ করতে তাদেরকে তুমি ডেট করতে পারতেনা। সেই ভাবটি আনা হয়েছে সাউন্ডট্র্যাকে - এই যথেষ্ট পরিমাণ ভালোবাসা না পাওয়ার আইডিয়াটি।
Comments
Post a Comment