একটি রুম ও আমার জীবনের ১ঘন্টা ৪০মিনিট (অ্যাপ্রোক্সিমেটলি)
শুরুতে আমার জানা একটি টিডবিড দিয়ে শুরু করি। ইন্সুরেন্স ও সার বিক্রেতা হ্যারোল্ড পি. ওয়ারেন একাডেমি অ্যাওয়ার্ডপ্রাপ্ত স্টারলিং সিলিফ্যান্টের সাথে একটি বাজি ধরেছিলেন যে, যে কেউই সিনেমা লিখে বানাতেও পারে। এভাবে মুক্তি পায় ১৯৬৬ সালে মানোসঃ দি হ্যান্ডস অফ ফেইট ; বাকিটা ইতিহাস। বলা বাহুল্য, ওয়ারেন বাজিতে জিতেছিলেন কারণ তিনি ফিল্মটা বানিয়ে শেষ করতে পেরেছিলেন।
টমি উইসও এরকম কোন বেট করেছেন বলে জানা নেই - তবে 'দি রুম' এখন পরিচিত 'সিটিজেন কেইন অফ ব্যাড মুভিস' হিসেবে, আবার অন্যতম কাল্ট ক্লাসিক হিসেবে।
হ্যা, লিসার মা, আমিও এই প্রশ্ন অনেকবার করেছি...
গল্প হলো এরকমঃ সফল ব্যাঙ্কার এবং চাকরস্বামী (চাকর যে স্বামী) জনির সাথে লিসার কথা পাকাপাকি। এরপর লিসা ঠিক করে সে জনিকে ভালোবাসেনা। ট্র্যাজেডি আনফোল্ডস।
যদিও ফিল্মটি (মেলো)ড্রামা কিন্তু ক্রিটিকরা স্বাচ্ছন্দ্যেই একে কমেডি হিসেবে রিভিউ দেন। কিভাবে ফোনের অপর প্রান্তের কথা টেপ রেকর্ডে ধরা পড়ে বা সেফটি ক্যাচ ছাড়া গুলি ফায়ার হয় ইত্যাদি টেকনিক্যালিটিতে গেলাম না। ১৫ সেকেন্ডে ফুল কিনে বের হয়ে যাওয়ার ব্যাপার, বা মার্কের সাথে ছাদে দেখা হওয়ার দৃশ্যঃ এই সিনেমার আসল ম্যাজিক, তা নিজের চোখে দেখতে হবে।
এই সিনেমাটি ৬ মিলিয়ন বাজেটে তৈরি হয়েছে। এই 'নলেজ' নিয়ে দেখতে বসা হলো।
মাঝে মাঝে মনে হতে পারে বাংলা সিনেমা দেখছিঃ মানে, টিনশেডের ঘর ছাদে, আরএফএল প্লাস্টিকের চেয়ার, চালের বস্তা নায়িকা...
প্রথমেই সিনেমার 'নাতিদীর্ঘ' সেক্স সীন দিয়ে পরিচিত হবেন। প্রথমবার মিস করলে সমস্যা নেই - পুরো সীনটি হুবুহু আবার দেখতে পারা যাবে কিছুক্ষ্ণ পরেই। পৃথিবীর সবচেয়ে ক্লু-লেস চরিত্র হিসেবে জিতে যাবে মার্ক - প্রতিটি দৃশ্যেই "এটা তুমি কি করছো?"
উইসও-র প্রতিটা লাইনের পরে সোজা মুখে সহঅভিনেতাদের কাজ চালিয়ে যাওয়া বেশ প্রশংসনীয়। শেষের দৃশ্যটি একটি ইমোশনাল রোলার কোস্টার রাইডঃ কিং-কং স্বরূপ দাপাদাপি, পরপরই...। ভালো জিনিস হলো, নগদে কিছু সানফ্রান্সিসকোর মনোরম এরিয়াল ভিউ ফ্রি। লিসার কুটনি মা চরিত্রে ক্যারোলিন মিনোটকে ভালো লেগেছে, বুড়ি ভালোই চেষ্টা করেছেন।
সবচেয়ে ভালো ব্যাপার হলো কয়েকবছর পর আবার দেখা হলে নতুনের মতই লাগবে। এত কিছু নিয়ে বলা হলো কিন্তু লিসা যে পাইন্যাপল পিজা অর্ডার দিয়েছে তা নিয়ে কেউ কিছু বললোনা...।
আচ্ছা...সিনেমাটিকে এতক্ষ্ণ শুধু পঁচালামই। একদম কোয়ালিটিহীন একটি অখাদ্য যাকে কমেডি ভ্যালুর জন্য দেখা যায়, ব্যাপারটা তা হতে পারে - কিন্তু কমেডিরও একটা মেয়াদোত্তীর্ণের তারিখ আছে, তাইনা? কিন্তু কি কারণে দি রুম পরিণত হয়েছে একটি কাল্ট ক্লাসিকে? সত্যি বলতে সিনেমাটি তৈরিতে উইসও-এর চেষ্টার কমতি ছিলনা। সবচেয়ে জনপ্রিয় শট
"I did not hit her! It’s not true! It’s bullshit! I did not hit her! I did not! (he throws a water bottle to the floor) Oh, hi Mark."
মোট ৭ সেকেন্ড - কিন্তু ফিল্ম করতে লেগেছিল ৩ ঘণ্টা ও ৩২ টেইক। এর মাঝে স্ক্রিপ্ট সুপারভাইজর-স্ল্যাশ-পার্টটাইম ডিরেক্টর বারবার বলছিলেন 'উপরে, উপরে তাকাও' ইত্যাদি। এভাবে সহ-অভিনেতা গ্রেগ সেস্ট্রেরো থেকে শুরু করে সেটের সবাই হাসি থামিয়ে কিভাবে ব্যবহারযোগ্য এডিট বের করেছেন তা তাদের এক্সপিরিয়েন্স থেকে জানা যায়।
এবং এই ড্রামা সিনেমাটির কাল্ট জনপ্রিয়তা হয়তো শুরু এর সেলেব্রিটি-ফ্যান ফলোয়িং থেকে, যারা হয়তো শুনেছিলেন যে 'দি রুম' এর প্রথম স্ক্রিনিং এ অনেকে লুকিয়ে হল থেকে বের হয়ে গিয়েছিল যাতে পরে কেউ তাদের চিহ্নিত করতে না পারে।
তবে এর জনপ্রিয়তা-বৃদ্ধি ব্যাপারটাকে সেই কলার খোসা জোক এর সাথে তুলনা করা যায়ঃ হ্যা, আমাদের প্রিয় কলার খোসা গ্যাগ, যার সাথে পরিচিতি হয়েছে ট্ম অ্যান্ড জেরি এর মাধ্যমে। মজার ব্যাপার হচ্ছে যে, কলার খোসা ১৯০০ সালের শুরুতে আসলেই ছিল একটা "পাব্লিক হাজার্ড"। মূলতঃ চলচ্চিত্রের নির্বাক যুগে ( হ্যারল্ড লয়েডের একটি শর্ট কমেডি থেকে সূত্রপাত ) এই 'ভয়াবহ' ব্যাপারটি একটি গ্যাগ-এ পরিণত হয়। আর গ্যাগটি আজও চলছে - চার্লি চ্যাপলিন হোক বা সে টম।
কমেডির এই নন-কমেডিক ভ্যালুটাই একদিক দিয়ে কমেডির গভীরতা বৃদ্ধি করেঃ যেকারণে শেষ দৃশ্যটি হাসাহাসি দিয়ে শুরু করার পর এর শেষপর্যায়ে ট্র্যাজেডির সম্মুখীন হয়েও দর্শক হিসেবে চুপ হয়ে থাকা একটু কঠিন। এই কারণেই হয়তো ৯/১১ মিম, বা অনিয়ন আর্টিকেল এখনও চলে।
যাইহোক, শেষ করলাম জোকের ব্যাখ্যা দিয়ে জোকের রস চিপে বের করার মাধ্যমে। তবে এই কারণেই বলবো, জেমস ফ্র্যাঙ্কো অভিনীত টমি উইসও এর চেয়ে টমি উইসও অভিনীত টমি উইসও অনেক বেশি সুপিরিয়র।
Comments
Post a Comment