রিভিউঃ Sala samobójców (2011)

আত্মহত্যা ব্যাপারটা নিয়ে ডিয়েল করা সিনেমাগুলো বেশিরভাগই একটু ইন্ডি বা আন্ডারগ্রাউন্ড ধরনের, আমার দেখা অন্যান্য পলিশ ডাইরেক্টরদের সিনেমাগুলোও। সেই হিসেবে ইয়ান কোমাসার তৃতীয় ফিচার ফিল্ম Sala samobójców (2011) বা Suicide Room মেইন্সট্রিমের দিকে।


গল্পের ব্যাপারটা এরকম, পলিটিশিয়ান বাবা ও অ্যাডভার্টাইজিং সিইও মায়ের একমাত্র সন্তান ডমিনিক সান্তোর্স্কি। ধনী পরিবার, দামি প্রাইভেট স্কুল, হুলুস্থুল ব্যাপার। প্রমের সময় একটা ঘটনায় সবাই বিশ্বাস করতে শুরু করে যে ডমিনিক হোমোসেক্সুয়াল, শুরু হয় সাইবার বুলিইং। এক পর্যায়ে ডমিনিক পরিচিত হয় সিল্ভিয়ার সাথে - সে প্রধান একটি 'ওয়ার্ল্ড অফ ওয়ারক্রাফট' অনুপ্রাণিত অনলাইন ভার্চুয়াল জগতের, যার নাম সালা সামোবইসভ, বা সুইসাইড রুম।

ফিল্মটি দেখার প্রথম ইম্প্রশন হচ্ছেঃ ইমোকোর। আমাদের টিনেজ বয়সের 'সবুজ রুমে কালো চুলের ছেলে কালো হুডি পড়ে মাটিতে বসে আছে' জাতীয় ছবি প্রোফাইল পিকচার দেওয়া আর 'বুলেভার্ড অফ ব্রোকেন ড্রিমস' গান শোনার দিনের কথা মনে পড়ে গেল। তবে সিনেমাটিতে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ থিম উঠে এসেছে - একাকীত্ব, ডিপ্রেশন, সুইসাইডাল টেন্ডেন্সি, ইন্টারনেটের প্রভাব, পিয়ার প্রেশার, ইত্যাদি। 


এই যুগের টিনেজারদের পার্সোনালিটি ও পারিবারিক অবস্থার প্রায় সবগুলোই ডমিনিকের মধ্যে দেখা যায়ঃ নিজের সমস্যার বিষয় চেপে রাখা, নিজের মানসিকতা বহন করে এরকম কাউকে খোঁজা ইত্যাদি। তবে সবচেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ হলো ডমিনিকের সাথে তার বাবা-মায়ের সম্পর্ক, দুঃখজনকভাবে যা অনেক বাস্তব - এবং আমার কাছে মনে হলো তা বাংলাদেশ হোক বা পোল্যান্ড ব্যাপারটা সবজায়গায় একই। 
দেখা যায় বাবা ও মা তাদের নিজের জগতে ব্যস্ত - তাদের কাজের ক্ষেত্রেও একে অপরের থেকে দূরে সরে যাচ্ছেনঃ বাহিরে তাদেরকে ভালো দেখা গেলেও তারা যে আসলে ডিস্ফাংশনাল তা এখানে পরিষ্কার চোখে পড়ে।  ফিল্মের একপর্যায়ে ডমিনিক দশদিন তার রুম থেকে বের হয়না, এমনকি খাওয়ার জন্যও না - তা নিয়ে তাদের বিন্দুমাত্র জ্ঞান নেই, যেমন নেই তার প্রিয় গান, বই এগুলো নিয়ে। কিন্তু ডমিনিকের যখন ডিপ্রেশন ধরা পড়ে তখন তারা তা নিয়ে বিব্রতবোধ করেন। যখন পাব্লিক ক্লিনিক তার ডিপ্রেশন নিয়ে তার বাবা-মাকে জানায় তখন তারা চিকিৎসককে প্রশ্নবিদ্ধ করেন।




এমনকি যখন ডমিনিকের অবস্থা খারাপের দিকে পৌঁছায় তখন তারা বাসায় নিয়ে আসেন সাইকোথেরাপিস্ট - কিন্তু তখনও তাদের চিন্তা থাকে তাদের নিজের উদ্দেশ্য সাধন করা - যেন তাদের ছেলে একমাসের মধ্যে ফাইনাল পরীক্ষা দিতে পারে, এবং সামাজিকভাবে তাদের নাক কাটা না যায়। একপর্যায়ে তার বাবা-মা তার মেন্টাল হেলথের ব্যাপারে চিন্তিত হয়ে তার সাথে যোগাযোগ আবার শুরু করার চেষ্টা করলেও ততদিনে অনেক দেরি হয়ে গিয়েছে; সে তাদের কাছে থেকে সরে গিয়েছে অনেক দূরে এবং ইন্টারনেট আসক্ত হয়ে পড়েছে। 

এটি আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ থিম। আমরা দেখি যে ডমিনিকের স্কুলের বন্ধুরা ছাড়া তার আর কেউ নেই - এবং তারাও তাকে মানসিক অত্যাচার করে চলেছে; এভাবে সে 'সুইসাইড রুমের' প্রতি আরো বেশি নির্ভরশীল হয়ে পড়ে, হয়ে পড়ে সিল্ভিয়া ও তার গ্রুপের প্রতি, যাদের প্রধান উদ্দেশ্যই আত্মহত্যা করা। তাদের প্রধান বক্তব্য- এই পৃথিবী আমাদেরকে বুঝতে পারেনা - এই মনোভাবটির সাথে ডমিনিক নিজের মনোভাবের সাথে মিল খুঁজে পায়। শুধু তাই নয়, প্রথমে সিল্ভিয়া তাকে সাহায্য করে থাকে স্কুলের মানুষদের সাথে চলাফেরা করার সাহস যোগাতে। 
কিন্তু সেই সাহস যোগানোর পথটি সুস্থ নয়; সে তাকে বলে টেরোরিস্টের মত সাহস অর্জন করতে। এছাড়াও আমরা দেখি ডমিনিক তার ক্লাসমেটদের অবজ্ঞাকে অনলাইনে প্রকাশ করছে তাদের ভয় হিসেবে - এভাবে একধরনের ডিল্যুশনের শুরু হয়। 


পরবর্তীতে সিল্ভিয়া ও তার গ্রুপ তাকে ব্যবহার করে তাদের আত্মহত্যায় সাহায্য করার জন্য - তাকে চাপ দিতে থাকে তাদের জন্য ওষুধ যোগার করে দিতে। দেখা যায় তাদের অসুস্থ বিভিন্ন শখ, যেমনঃ মানুষের আত্মহত্যা করার ভিডিও দেখতে থাকা, ঘর থেকে বের না হওয়া। এক পর্যায়ে দেখা যায় গ্রুপের অন্যান্যদের বিভিন্ন সমস্যাঃ বডি ইমেজ, ডিস্যাবিলিটি ইত্যাদি - যেগুলোর বাস্তবতা থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য তারা এই অনলাইন গ্রুপের সাথে যুক্ত থাকে এবং সেলফ-হার্ম মূলক কাজের মাধ্যমে সেই যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পাওয়ার চেষ্টা করে।

এসকল ঘটনার মাধ্যমে ডমিনিক আরো বেশি ডিপ্রেশনে চলে যায় - সেই সাথে ইন্টারনেটের প্রতি এত আসক্ত হয়ে যায় যে, একসময় তার বাবা ইন্টারনেট কেটে দিলে সে চেষ্টা করে সিল্ভিয়ার সাথে বাস্তবিকভাবে দেখা করার। এবং ফিল্ম শেষ হয় একভাবেই, যেভাবে সিনেমাটি এগিয়ে যাচ্ছিল।




সুইসাইড রুম হিসেবে যে ভার্চুয়াল ওয়ার্ল্ড দেখা যায় তা টিনেজারদের বাস্তব থেকে ভিন্ন এক রিয়েলিটি তৈরির মানসিকতা তুলে ধরে; জায়গাটি ভিসুয়ালি অনেক আকর্ষণীয় কিন্তু যথেষ্ট অবাস্তবিক - এর কিছু পরিমাণ ডিল্যুশন ও স্কিজয়ডাল ফ্যান্টাসি হিসেবে মনে করা যায়।

আমার মতে ফিল্মে ডিপ্রেশন, সেক্সুয়ালিটি, সন্তানকে নিয়ে বাবা-মার লজ্জার প্রকাশ ইত্যাদি অনেক বেশি সাব্জেক্ট অনেক কম সময়ে সরাসরি তুলে ধরা হয়েছে - যার ফলে কোন চরিত্রের প্রতি সিম্প্যাথি তৈরি হয়না, বা কোন কোন ক্ষেত্রে কিছু একটা করার উদ্দেশ্য অত বেশি স্পষ্ট হয়না। এছাড়া কিছু কিছু দৃশ্যে আসার ক্ষেত্রে সিনেমার ধারাবাহিকতা এতটা সাবলীল নয়। তবে এন্ডিংটি অনেক বেশি ট্র্যাজিক, এবং দর্শকদের অবশ্যই কিছুটা প্রভাবিত করে।


তবে টিনেজারদের মনোভাব, পরিবার ও কিশোরদের মধ্যে সম্পর্ক বৃদ্ধি, সুইসাইড ও সেলফ-হার্ম বিষয়টিকে জনসম্মুখে তুলে ধরার জন্য অবশ্যই একটি ভালো মিডিয়াম। ফিল্মটি সেলফ-হার্ম ভিক্টিমদের জন্য যথেষ্ট ট্রিগারিং হবে,কারণ এতে হাত কাটা এবং একটি সুইসাইড দৃশ্য সরাসরি দেখানো হয়। 

হ্যামলেটের রেফারেন্স দেখা যায় সিনেমাটির শুরুর দিকে - এভাবে হয়তো 'টর্চার্ড প্রিন্স' এর চরিত্রায়ণের প্রতি ইঙ্গিত দেয়া হয়েছে ডমিনিকের মধ্যে। যাইহোক, সিনেমাটির সাউন্ডট্র্যাক অনেকগুলো টেকনো মিউজিক, ক্লাসিক পিয়ানো কম্পোজিশন ও ইমোরক ট্র্যাকের সমাহারঃ মনে রাখার মত একটি হলো বিলি ট্যালেন্ট এর 'নাথিং টু লুজ' গানটির ব্যবহার।

সিনেমাটিতে কিছু রেফারেন্সও রয়েছে বাস্তব জীবনে সুইসাইড ভিক্টিমদেরঃ ফেইসবুক সিকোয়েন্সগুলোতে কয়েকজন আত্মহত্যাকারীদের নাম, এবং সুইসাইড রুমের 'সোনালি গাছ'টির ফটোগ্রাফগুলোর মধ্যে ইউকিও মিশিমার ছবি, যিনি 'সেপ্পুকু' নামক রিচুয়াল সুইসাইডের  মাধ্যমে মৃত্যুবরণ করেন। 

Comments

Popular posts from this blog

The Eyes of My Mother: নারী, প্রকৃতি, বিচ্ছিন্নতা

চাইনিজ জেসমিন টি