Dig Two Graves (2014)



হান্টার অ্যাডামসের গল্প এবং ডিরেকশন, আমার কাছে নতুন, যেমন নতুন সুইডিশ সিনেমাটোগ্রাফার এরিক ম্যাডিসনের কাজও। সেই হিসেবে পুরষ্কারজয়ী 'ডিগ টু গ্রেইভস' সিনেমাটি আমার জন্য পরিচিতিপর্ব বলা চলে।

মূলতঃ হরর ক্যাটেগরিতে নমিনেশন পেলেও একে থ্রিলার বলাটাই ভালো যদিও এর মধ্যে কিছু হরর ইলিমেন্ট আছে। বিশেষতঃ জিপ্‌সি, ব্ল্যাক ম্যাজিক কিছু কিছু উপাদান আছে, যদিও সিনেমার দৈর্ঘ্যের তুলনায় সেগুলোর উপস্থিতি কম। কিন্তু সিনেমার বর্ণ্নায় এতটুকু দেখে মনে হওয়াই স্বাভাবিক এটি একই ধরনের ফিল্মগুলোর (১৯৭৩ এর 'দি উইকারম্যান  ' এর কথা মনে আসছে) মত এতে ন্যুডিটি, স্ল্যাশার থিম থাকবে কিন্তু এগুলো নেই বললেই চলে। যদিও একধরনের শিরশিরে ভাব আছে কিছুটা। তথাপি, হরর থিম।

এছাড়াও, সাউথার্ন ইলিনয়ের প্রকৃতি-আবৃত সেটিং, সেট ডিসাইন এবং ম্যাডিসনের ফটোগ্রাফিতে সিনেমাটিতে সাউথার্ন গথিক ভাবটা প্রকটভাবে চোখে পড়ে। যদিও অনেক চরিত্রের সাউথার্ন অ্যাক্সেন্ট এবং সিনেমাটির কিছু 'কামিং-অফ-এইজ' থিমের জন্য একে অনেকে স্টিফেন কিং এর 'দি বডি ' এবং সেই সূত্রে 'স্ট্যান্ড বাই মি ' (১৯৮৬) এর সাথে তুলনা করেন (' দি বডি ' সাউথার্ন গথিক জনরার সৃষ্টিতে ভূমিকা রেখেছে, অবশ্যই) - কিন্তু আমার কাছে এটি 'টু কিল আ মকিংবার্ড' (১৯৬২), দি রিফ্লেক্টিং স্কিন (১৯৯০) বা উইকারম্যানের কথাই মনে পড়বে বেশি।




গল্পটা সরল্ভাবেই শুরু, প্রধান চরিত্র জেক তার ভাইকে হারায় এক এক্সিডেন্টে, এরপর কিছু রহস্যময় মানুষ এসে তাকে বলে জীবনের বিনিময়ে জীবন পাওয়া যাবে। আচ্ছা। এতটুকু জেনে ফেলার পরে শুরুতে যখন আলোকোজ্জ্বল দিনের ওয়ার্ম লাইটিং এ আমরা ভাইবোনকে যেতে দেখি তখন বুঝে ফেলি অবশ্যই খারাপ কিছু একটা হবে। তারও আগে আমাদের দেখানো হয় সিনেমাটি থেকে আরো ৩০ বছর আগের ঘটনা, খুবই ক্রিপ্টিক - আমরা বাকি ফিল্মে এর অর্থ এবং প্রধান গল্পের সাথে আর সংযোগ খুঁজবো। এভাবে ডিরেক্টর একটা সাস্পেন্স তৈরি করতে সক্ষম হয়েছেন।

এবং গল্প এগোয় ঠিকই। এমনভাবে যে, সিনেমা শেষ হওয়ার মূহুর্তে কোন প্রশ্ন বাকি থাকবেনা। এখানে সিনেমাটিতে টেল-ডোন্ট-শোও এর ব্যবহার বেশি দেখা যায় অনেক। ভূতুড়ে দৃশ্যগুলোতে ছমছমে অ্যাম্বিয়েন্ট মিউজিকের ব্যবহার, ঘটনাক্রমে সংশ্লিষ্ট ফ্ল্যাশব্যাকের ব্যবহার, এবং জাম্পকাট (এত, এত জাম্পকাট) এর ব্যবহারের মাধ্যমে মনে কোন প্রশ্ন আসার আগেই তার উত্তর দেওয়া হয়ে যায় এখানে - এটি হয়তো অ্যাটেনশন-ডেফিসিট মেইন্সট্রিম সিনেমার দর্শকদের সিটে রাখতে পারে, কিন্তু সিনেমাটির নুয়্যান্সটা মাঠে মারা পড়ে।



সিনেমাজুড়ে প্রকৃতি, পরিবেশের ঘনত্ব, চরিত্রগুলোর মধ্যে শোক, দুঃখ, সেন্টিমেন্টালিটি - এগুলোকে অনুভব করার সময় দেননা ডিরেক্টর। সিনেমাটি হয়তো ১ ঘন্টা ২৪ মিনিটের বেশি সময় হলে ভালো হতো। আর এডিটিং-এ জাম্পশটের আধিক্যও এর জন্য দায়ী। আরও মসৃণভাবে শটগুলোকে আগিয়ে নেওয়া যেতো। যতটুকু সময়ে এক্সপোজিশনের জন্য প্রয়োজন, ঠিক ততটুকু দিয়েই পরের দৃশ্যে চলে যান ডিরেক্টর। কিছুটা হতাশাজনক, কারণ গল্পটা সিম্পল হলেও একে খুবই সুন্দরভাবে ফুঁটিয়ে তোলার স্কোপ ছিল - এই পোটেনশালটি এডিটের ট্রান্সলেশনে হারিয়ে গিয়েছে।

তবে সিনেমাটির ভালো কিছু দিক অবশ্যই রয়েছে - যে কারণে সিনেমা এবং সেই সাথে ডিরেক্টরের দক্ষতা ও সম্ভাবনা চোখে পড়ে ঠিকইঃ সিনেমার শেষ দৃশ্য, যার জন্য প্লটহোল, কিছু কিছু চরিত্রের দুর্বল ক্যারেক্টারাইজেশন ইত্যাদি নেগেটিভ অ্যাস্পেক্টগুলোকে মাফ করে দেওয়া যেতে পারে। আর গল্পটিকে প্রাণ দিতে সবচেয়ে বেশি কৃতিত্ব যার তিনি হলেন টম লেভিন ( সাইলেন্স অফ দি ল্যাম্বস  ) - অসাধারণ অভিনয় দিয়ে তিনি বুড়ো শেরিফ ওয়াটারহাউজ চরিত্রটির মধ্যে কঠোরতা আবার স্নেহশীলতা দুইটাই তুলে ধরতে পেরেছেন।  ভায়োলিনের একটা ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক শেষ দৃশ্যটিতে ভালো লেগেছে।

সিনেমাটিতে নির্দিষ্ট কালার প্যালেট বা কালার স্কিম আছে এটা বলা যাবেনা। কখনো বেশি কখনো কম টেম্পারেচারের দৃশ্যগুলো। অনেক সময়েই দৃশ্যগুলোর মাঝখানে পাতাহীন গাছ, প্রশাখার ফটোগ্রাফিগুলো ভূতুড়ে বা বিরান ভাবটা তুলে ধরে, তবে কিছু ওয়াইড-অ্যাঙ্গল শট থাকলে সেন্স-অফ-প্লেসের ব্যাপারটা পরিপূর্ণ হতো। ওভারঅল, দেখার মত একটা ফিল্ম, কিন্তু মনে রাখার মতন না। 

Comments

Popular posts from this blog

The Eyes of My Mother: নারী, প্রকৃতি, বিচ্ছিন্নতা

রিভিউঃ Sala samobójców (2011)

চাইনিজ জেসমিন টি