সুইসাইড সার্কলঃ সুইসাইড ও সমাজ

লেখক, ফিল্মমেকার, কবি সিওন সোনোর সম্ভবত সবচেয়ে পরিচিত সিনেমা Suicide Club/ Suicide Circle (২০০১) নিয়ে একটি ব্যাপার পরিষ্কারঃ এই ফিল্মটি মানুষ হয় ভালোবাসে নাহলে বুঝতে পারেনা। সিনেমাটি নিয়ে লিখতে বসে লিখা শেষ করতে পারছিলাম না। তাই এটি যতটা না রিভিউ, তার চেয়ে বেশি অ্যানালাইসিস। তাই বলা বাহুল্য - এটি ভালোই স্পয়লার্ড। আমি রিকমেন্ড করবো দেখা না থাকলে আগে সিনেমাটি দেখে নিতে। আমার মত যারা স্পয়লার জেনে নিয়েই শুরু করো তাদের কথা ভিন্ন।



যাইহোক, শুনলে হয়তো মনে হবে আমি প্রথম দলে - কিন্তু সিনেমাটির ব্যাকগ্রাউন্ড নিয়ে জানা যায় যে, গল্পকার/ডিরেক্টর সোনোর বন্ধু হঠাৎ করে সুইসাইড করেছিলেন - কারণটা আর জানা যায়নি। সেখান থেকে ইন্সপায়ারেশন পেয়েছিলেন এই অল-রাউন্ডার। তাই সিনেমাটিতে যদি কনফিউশনের একটা ভাব থাকে, তবে বলতে হবে সেটি তার এই মাইন্ডসেট থেকেই উদ্ভূত। তাই সিনেমাটির ডিটেক্টিভ কুরোদা ও ডিটেক্টিভ শিবুসাওয়ার মতন আমরাও যদি চিন্তা করতে থাকি কিভাবে কি - তাহলে একটু ঝামেলায় পড়তে হবে।

অনেক ক্রিটিক কোন এক কারণে একে তাকাশি মিকের Audition (১৯৯২) এর সাথে তুলনা করেন (দুইটিই হরর/ রিও ইশিবাশি আছেন দুইটিতে এই কারণে???)। যদিও আমি এককথায় বলবো মিকে ও সোনো দুইজনই শক্তিশালী গল্পকার - আর দুইটি সিনেমাতেই অনেক গভীর বিষয় কভার করা হয়েছে।
যদিও সিনেমাটির নাম 'সুইসাইড ক্লাব', কিন্তু একপর্যায়ে স্পষ্ট হয়ে উঠে যে সুইসাইড সিনেমাটির সমস্যা নয়, বরং সমাধান বলা যেতে পারে। তবে সত্যি বলতে এটি গল্পটির একটি প্লট পয়েন্ট যা দিয়ে সোনো অনেকগুলো আইডিয়া প্রকাশ করতে চেয়েছেন। ইলেক্ট্রিক শীপ ম্যাগাজিন-এ দেখেছিলাম যে 3AM এর একটি ইন্টারভিউ এ সোনো বলেছিলেন এটি একটি 'হেট ফিল্ম' - তিনি আরো চেয়েছিলেন যে, জাপানিরা যেন এই সিনেমাটি দেখে তাকে ঘৃণা করে। এথেকে, সোনো যে জাপানি সমাজের গোঁড়ায় আঘাত করার চেষ্টা করেছেন - এমনটা ধারণা করা খুব বেশি ভুল নয়।


যেমন, সিনেমাটির সবচেয়ে আলোচিত ওপেনিং অ্যাক্টে আমরা দেখতে পাই টোকিও ট্রেন স্টেশনের সাধারণ দৃশ্য - যা সহজেই একটা চীজি কার্নিভাল মিউজিক ব্যাকগ্রাউন্ডে দেওয়ার সুযোগ করে দেয় - ফলস্বরূপ দেখা যায় প্রায় ৫৪ জন ছাত্রীর এই মিউজিকের সাথে সাথে লাফ দেওয়ার দৃশ্য - যা এই ভয়াবহ ব্যাপারটাকে বেশ ডার্ক কমেডিক একটা ভাব দেয়। এই ভাইবটা পরে আরো দেখা যায়, যেমন - সেই স্কুল সুইসাইড দৃশ্যের পরবর্তীতে পুলিশদের জিজ্ঞাসাবাদের পরবর্তীতে ডিটেক্টিভ হাগিতানি দেখতে পান যে কার্নিশে একটা কান - যা তিনি আরেকটি পুলিশকে বলেন ফেলে দিতে। এ থেকে আমরা বুঝতে পারি যে তারা, বা তাদের একাংশ এই ব্যাপারটাকে গুরুত্বসহকারে দেখছেনা। সত্যি বলতে ডিটেক্টিভ কুরোদার সেই ট্র্যাজেডির আগ পর্যন্ত তারা সেটাকে গুরুত্ব দিচ্ছিলনা, যা শোনাও যায় শিবুসাওয়ার কণ্ঠে।

তবে এসব যে পুলিশের গাফিলতি ব্যাপারটা কিন্তু তা নয়। বরং এটি আসলে সুইসাইড ব্যাপারটাকে গুরুত্ব দেওয়ার ক্ষেত্রে সমাজের অক্ষমতা। অনেকেরই জানা থাকবে যে, জাপানি মধ্যযুগীয় সমাজে 'সেপ্পুকু' বা রিচুয়ালিস্টিক সুইসাইড ছিল অনেকের অপমান থেকে মুক্তি পাওয়ার উপায়। অর্থাৎ সুইসাইড এখানে একটি সলিউশন। আইরনিক ব্যাপারটা হল যে, সুইসাইড, ডিপ্রেশন, মেন্টাল ইলনেস - এগুলো সেখানে অনেক ট্যাবু একটা টপিক (এখনও তা অনেকটা পরিবর্তন হয়নি বলেই শোনা যায়), এই ব্যাপারটা আমাদের সমাজের সাথে অনেক স্পষ্টভাবে তুলনীয়। সেই সাথে তাদের 'জেনারেশন গ্যাপ' এই জিনিসটাও অনেক প্রভাবশালীঃ আরেকটি মিল। এই দুইটি ব্যাপার একসাথে এখানে কাজ করে - যা আমরা সেই দৃশ্যটিতেই দেখি; যখন ডিটেক্টিভ মুরাতা এই সুইসাইডের ব্যাপারগুলোকে টিনেজারদের মধ্যে একটা 'ট্রেন্ড' বলে অভিহিত করেন। এই জেনারেশন গ্যাপটির কারণেও তারা কিশোরদের জেনারেশনের মধ্যে ইন্টারনেটের প্রভাবের গুরুত্ব বুঝতে ব্যর্থ হন। 

এরকম ছোটখাটো ব্যাপার দিয়ে গভীরভাবে বোঝানোর ক্ষমতা এবং এই 'অ্যাটেনশন-টু-ডিটেইল' - এগুলো সিনেমার খুব ভালো কিছু দিক, যদিও এটি সব সিকোয়েন্সে পাওয়া যাবেনা, কিন্তু কিছু কিছু ক্ষেত্রে পাওয়া যায় ঠিকইঃ যেমন, হস্পিটালের গার্ড যখন নার্স সাওয়াদাকে খুঁজতে উপরে এসে দেখে যে সে নেই তখন সে বুঝতে পারেনা তার কি হয়েছে, কিন্তু আমরা পারি ঠিকই - যখন দেখি জানালায় হাতের ছাপ। অথবা, মিৎসুকোর শুয়ে পড়া তার বয়ফ্রেন্ড যেখানে মারা গিয়েছিল সেই নকশার উপর। আবার দেখা যায়, সুইসাইডের আগ মূহুর্তে ছেলেমেয়েগুলো বেশ হাস্যোজ্বল, কিন্তু কুরোদা যখন ট্রেন দিয়ে যাচ্ছে তখন সে দেখে সাধারণ মানুষ - তাদের মুখে কোন হাসির ছাপ নেই।

এসকল ব্যাপার আরো পরিষ্কারভাবে বোঝা যায় সিওন সোনোর নভেল কানজেনবান  থেকে (যেটার অনলাইন কপি পাওয়া আমার পক্ষে সম্ভব হয়নি দেখে তার রিভিউ দিয়ে চালিয়ে দিচ্ছি); সেখানে তিনি জেনারেশন গ্যাপ সহ পারিবারিক বন্ধন ইত্যাদি নিয়ে আলোচনা করেছেন। বলাই যায়, এটি সুইসাইড সার্কল  (ও এর স্পিরিচুয়াল সিকুয়েল নোরিকো'স ডিনার টেবল ) এর একটি রিকারিং থিম।    


   

এই পারিবারিক বন্ধনের ব্যাপারটাও স্পষ্ট হয়ে উঠে কুরোদার ট্র্যাজেডি থেকে - যখন সে দেখতে পায় তার পরিবারের সদস্যদের সম্পর্কে সে জানতোনা। ব্যাপারটা সেও বুঝতে পারে কিন্তু ততক্ষ্ণে অনেকটা দেরি হয়ে গিয়েছে। সিনেমার শুরুতেই আমরা বুঝতে পারি কুরোদা তার স্ত্রী-সন্তানদের প্রতি যে মনোযোগ বাড়িয়ে দিয়েছে তা অনেকটাই হঠাৎ। খেয়াল করলে দেখা যাবে এই সিকোয়েন্সটির শুরুতে কুরোদা বাসায় ঢুকে এবং তার মেয়ের সাথে শেষ বাক্য বিনিময় হয়, কিন্তু এটি তার পিছনে অর্থাৎ তার খেয়ালের বাইরে; বোঝাই যায় সে সাধারণতঃ এরকম করেই অভ্যস্ত।  

জাপানে ইন্ডাস্ট্রিয়ালাইজড সমাজে মানুষের ইন্ডিভিজুয়ালিস্টিক হয়ে যাওয়ার প্রবণতা বৃদ্ধি পাচ্ছে, যেই কারণে সেখানে মানুষের মধ্যে একাকীত্ববোধ বেড়ে যাওয়ার আরেকটি কারণঃ যা শোনা যায় কুরোদার সাথে কথা বলা সেই অদ্ভূত শিশুর মাধ্যমে - যখন সে বলে যে তারা সবাই শুধু নিজেকে নিয়ে চিন্তা করায় ব্যস্ত। তাই মানুষগুলোর মৃত্যুর পিছনে দায়ী তারাই; (যা কুরোদা নিজেও স্বীকার করে নেয়)। এই আত্মকেন্দ্রিকতার বেঁড়াজালে আটকিয়ে পড়া মৃত মানুষগুলো শুধুই সংখ্যা; তাই আমরা দেখি রেললাইনে প্রাণ হারানো মেয়েগুলোকে নিয়ে অনেক সাধারণভাবেই আলোচনা করে সবাই।

এই স্বার্থকেন্দ্রিক সমাজ ব্যবস্থার যাঁতাকলে যে আক্রান্ত মানুষ, বিশেষ করে টিনেজাররা; এর একটি দিক হচ্ছে বড়দের দ্বারা কিশোরদের প্রতি চাপ (কঠিন পরীক্ষা, অসহযোগিতা), আরেকটি দিক হচ্ছে কিশোরদের নিজেদের মধ্যকার প্রতিযোগিতা আর পিয়ার-প্রেশার। এই 'পিয়ার-প্রেশার' একটি  বড় সমস্যা যখন ছাত্রছাত্রীরা নিজেদেরকে অন্যের সমতুল্য করতে অসহনীয় প্রতিযোগিতায় মেতে উঠে। যেটা আমরা দেখি স্কুলের সুইসাইড দৃশ্যটিতেঃ যেখানে শিক্ষার্থীগুলো, রেললাইনে ঝাঁপিয়ে পড়া ছাত্রীগুলোকে 'টেক্কা' দেওয়ার কথা বলে সংখ্যায়, মৃত্যুর পদ্ধতিতে। এমনকি লাফ না দেওয়া তিনজন ছাত্র-ছাত্রীরাও অনেকটা বাধ্য হয়েই লাফ দেয়। এখানে তাদেরকে প্রেশার দেওয়ার মত কেউ না থাকলেও সাবকনশাস-ভাবে তারা সমাজের প্রভাবে বন্দি। 




ক্রিটিকদের মতে, সিনেমাটি 'হ্যামেলিনের বাঁশিওয়ালা' গল্পটির হালকা রিটেলিং। বাঁশিওয়ালার মত কিশোরদেরকে তাদের মৃত্যুর দিকে নিয়ে যায় এক বেনামী 'সুইসাইড ক্লাব'; যেটা অসম্ভব নয়ঃ জাপানি বিশেষত ইন্ডি ফিল্মগুলোতে রূপকথা থেকে অনুপ্রেরণা নেওয়া আনকমন নয়। আরেকটি প্রধান মত হচ্ছে সিনেমাটিতে সোনো পপকালচারের প্রতি মানুষের অবসেশনকে তাচ্ছিল্য করেছেন। 'ডেসার্ট' ব্যান্ডটিতে শিশু মেম্বার দ্বারা এর কুটিলতাকে ঢেকে রাখার ধারণা এবং তাদের শুরুর গান 'মেইল মি' এর জনপ্রিয়তা যা দেখায় অপ্রয়োজনীয় ছোটখাটো বিষয় নিয়ে মানুষের মাতামাতি। আবার গ্ল্যাম-রক আবেশধারী 'জেনেসিস' যে নিজেকে 'তথ্যপ্রযুক্তি যুগের চার্লস ম্যানসন' দাবি করে।    

তবে সিনেমাটিতে ধার্মিক সিম্বলিজমই প্রভাবশালী। সবচেয়ে বড় ও গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে 'রিইনকার্নেশন' বা পুনর্জাগরণ। যেটি জাপানি বৌদ্ধ ধর্মের একটি উল্লেখযোগ্য বিষয়।

পক্ষান্তরে শিনতো ধর্মের মৃত্যুর পরবর্তী জীবনের ধারণা অনেকটা গ্রিক 'হেডিস' এর মতন; অনেকটা নেগেটিভ তাই শিনতো অন্ত্যোষ্টিক্রিয়া বৌদ্ধ নিয়মে হয়ে থাকে (এই দুইটি জাপানে প্রভাবশালী দুইটি ধর্ম)। 
এখানে পুনর্জাগরণ বিষয়টি 'ট্রান্সমাইগ্রেশন' বা আরেক দেহে জন্মগ্রহণ করা, অথবা 'রিবার্থ' বা পুনর্জন্মের সমতুল্য নয়। এই দিক থেকে জাপানি পুনর্জাগরণ ব্যাপারটি ভারতীয় বা পশ্চিমা ধারণাগুলো থেকে ভিন্ন। তাই 'কার্মা' এর ধারণা এখানে প্রযোজ্য নয়। মূলতঃ জাপানে বিশ্বাস করা হয় মৃত্যুর মাধ্যমে সেলফ-অ্যাকচুয়ালাইজেশনের একটা ধাপ সম্পন্ন হয়, অর্থাৎ মৃত্যুর মাধ্যমে 'ইলুমিনেশন' অর্জন করা এবং নতুনভাবে শুরু করা। এই পার্থিব ধ্বংসের মাধ্যমে পৃথিবীর সবকিছুর সাথে এক হয়ে যাওয়া হয়। হিদেয়াকি আনোর নিওন জেনেসিস ইভাঞ্জেলিওন  সিরিজে এই থিম দেখতে পাওয়া যায়।  

এছাড়াও আশির দশকে জাপানে একটি ধারণা তৈরি হয়েছিল সহযোদ্ধার হাত ধরে মৃত্যুবরণ করার যেন তারা পরজন্মে একই স্মৃতি নিয়ে এগোতে পারে 'অন্ধকার'এর বিরুদ্ধে। সিনেমাটিতেও এই বিষয়গুলো বারবার উঠে এসেছে, সবচেয়ে স্পষ্টভাবে বোঝা যায় ক্রোনেনবার্গীয় মানুষের চামড়ার টুকরো দিয়ে যুক্ত স্পাইরালগুলোতে। চামড়া গুলো তাদের কাছ থেকে নেওয়া যারা এই কথিত 'সুইসাইড ক্লাব'এর ঘোষণার সাথে একাত্ম হয়েছে। এ থেকে জুনজি ইতো'র উজুমাকি  (১৯৯৮-১৯৯৯) এর কথা মনে পড়ে যিনি হররের সাথে এই 'স্পাইরাল' আকৃতিকে পরিচয় করিয়েছেন।



এই সর্পিল আকৃতি অনেক ক্ষেত্রে রিইনকার্নেশন, সৃষ্টির বিবর্তন, এবং মানুষের চেতনাস্বরূপটির গোড়া থেকে উত্থানের প্রতিকৃতি। এই পুনর্জাগরণ একটা চক্র; আবার সিনেমাটির শেষের দিকেও শিশু দর্শকগুলোর একজনের থেকে 'বৃষ্টি থেকে মেঘ, মেঘ থেকে বৃষ্টি'-এর রেফারেন্স যেন তাই নির্দেশ করে। একারণেই সিনেমাটিতে বারবার এই প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করা হতে থাকে - "তুমি কি তোমার সাথে যুক্ত?" নিজেকে চেনার বা সেলফ অ্যাকচুয়ালাইজেশনকে এখানে বারবার তুলনা করা হতে থাকে বিভিন্ন চরিত্রদের তাদের প্রিয়জনের সাথে সম্পর্কেরঃ ভালোবাসার সম্পর্ক আমরা যেমন সহজেই অনুভব ও ব্যাখ্যা করতে পারি - নিজের সাথে নিজের আত্মার সম্পর্ক ঐভাবে ব্যাখ্যা করা তো দূরের কথা, অনুভব করাও সম্ভব নয়। 

জাপানের শিল্পায়নের যুগ যে মানুষের মধ্যে স্পিরিচুয়াল চিন্তা ভাবনা ও সহমর্মিতাকে অনুৎসাহিত করছে - এই সুইসাইডগুলোতে তার প্রত্যুত্তর দেওয়া হয়েছে - এরকম একটা ধারণা সিনেমাটিতে গভীরভাবে পাওয়া যায়। একারণেই যেন সুইসাইড-মুখী মানুষগুলো হাত ধরে লাফ দেয় (যদিও সত্যি বলতে এটি সবক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়)। 

          

এছাড়া আরেকটি সিম্বলিজম হলো পশুপাখি - বিশেষ করে খরগোশ অনেক দৃশ্যে দেখা যায়। আবার জেনেসিসের গানে এক 'হলুদ কুকুর' এর উল্লেখ। সিনেমাটি দেখার সময়ে সূক্ষ্ম বিষয়গুলোর প্রতি লক্ষ্য রাখতে হয়; এখানে প্রতিবার ডেসার্ট ব্যান্ডটির গানগুলো দেখানোর ইচ্ছাকৃত হোমোনিমের ব্যবহার (Dessart, Dessret, Desert) যেমন গুরুত্বপূর্ণ তেমনি গুরুত্বপূর্ণ এর লিরিকগুলো। 'জিগস পাজল' গানটিতে তারা বলে যে এই পৃথিবীতে খাপ খাওয়ানোর মত জায়গার অভাবে বিদায় বলে দেওয়া। আমার কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মনে হয়েছিল জেনেসিসের গানটি। সেখানে রবার্ট ব্রেসনের The Trial of Joan of Arc (১৯৬২) এর রেফারেন্স পাওয়া যায়ঃ এর মাধ্যমে সে এক মৃত্যুর কামনা করে যেটা কোন এক অর্থবহন করবে এবং অনেকদিন মনে থাকবে কারণ 'The Dead shine all night long' (মৃতদেরকেই মানুষ বেশি মনে রাখে এমন কিছু?)

তবে সিনেমাটি শেষ হয় একটি আশাবাদী টোন দিয়ে, ডেসার্টের গানের মাধ্যমেই। যেখানে তারা একভাবে সুইসাইড করতে নিরুৎসাহিত করে। লিরিকগুলো থেকে বোঝা যায় সোনো এখানে বলছেন কিভাবে প্রতিটি ক্ষুদ্র সিদ্ধান্ত অনেক বড় প্রভাব ফেলে - আর বলেছেন একে অপরের মধ্যে খোলাখুলিভাবে মনোভাব প্রকাশে উৎসাহী হতে। 

  


এত গভীর চিন্তাভাবনা ছাড়াও শুধু 'গোর'প্রেমী হরর ভক্তদের খুশি করার মতন অনেক বিষয় আছে সিনেমাটিতে। যদিও সিনেমার দৈর্ঘ্যের তুলনায় কিছু কম। তবে কোন কোন ক্ষেত্রে সেটি অনেক দক্ষতার সাথে অস্বস্তির উদ্রেক করে। যেমন কিয়োকোকে ধরে নিয়ে যাওয়ার পর বোওলিং পার্কের দৃশ্য। বা চারজন গৃহিণীর হাসিমুখে আত্মহত্যার কথা বলা। এই দিক থেকে সিনেমাটিতে ভয়ের ইলিমেন্ট নেই বললেই চলে। ডিরেক্টর এখানে 'শক ফ্যাক্টর' এর মাধ্যমে স্টেট্মেন্ট তৈরি করতে চেয়েছেন। অনেক ক্ষেত্রে লিঞ্চ-প্রভাবিত সারিয়েলিস্টিক আবহ দেখতে পাওয়া যায় ( শেষের দিকে লাল রুমটি দেখে আমার Fire Walk With Me (১৯৯২) এর কথা মনে পড়লো )। গার্ডের হঠাৎ করে ছায়ামূর্তি দেখা বা ফোনে কথা বলা শিশুর কাশির সমস্যার কোন ব্যাখ্যা পাওয়া যাবেনা।  তবে যারা ফিল্মটি দেখে ইতোমধ্যে সন্দীহান, তাদের ক্ষেত্রে এই কনফিউশন আরো বেড়ে যাবে। 

সবশেষে...কি বলবো। সুইসাইড সার্কল বা জিসাৎসু সাকুরু দেখা অনেক অনন্য একটা এক্সপিরিয়েন্স। হররে মোড়ানো একটা প্যাশোনেট সোশাল কমেন্টারি। কিন্তু তার চেয়েও বেশি - সোনোর জন্য সুইসাইডে প্রিয়জন হারানো থেকে এক ধরনের কাথার্সিস। আমার ক্ষেত্রে যেই সমাজে বাস করছি তাতে থাকার বিভিন্ন যন্ত্রণাগুলো আরেকজন ভাগাভাগি করছে এরকম একটা অনুভূতি।  


Comments

Popular posts from this blog

The Eyes of My Mother: নারী, প্রকৃতি, বিচ্ছিন্নতা

রিভিউঃ Sala samobójców (2011)

চাইনিজ জেসমিন টি