Posts

Showing posts from August, 2017

বিকালবেলার পাখিঃ জীবনের ফ্রেম,মধ্যবিত্ত রং

Image
বাংলাদেশে টেলিফিল্ম ক্যাটেগরিটা অনেকটাই নতুন - তাই আমার দেখা বেশিরভাগ টেলিফিল্মগুলো গল্পপ্রধান এবং ফরম্যাটগুলো নাটকের কাছাকাছি। শুধুমাত্র ছোটপর্দার জন্য টার্গেটঃ তাই টেলিফিল্ম স্পেসিফিক্যালি সিনেমা এক্সপিরিয়েন্স হবেনা এটাই স্বাভাবিক। তার মধ্যে কিছু কিছু টেলিফিল্ম এর বিষয় আর আর্ট ডিরেকশন সিনেমার অনেকটা কাছাকাছি নিয়ে যায়। রাইটার-ডিরেক্টর আদনান আর রাজীবের নির্দেশনা আর কামরুল হাসান খসরুর ফটোগ্রাফিতে বিকাল বেলার পাখি   (২০১৭) টেলিফিল্মটি, এরকমই, নাটকের চেয়ে সিনেমার একটু কাছাকাছি।  ইদানিং টেলিফিল্ম বিষয়টা অনেক জনপ্রিয়। বিশেষ করে মোস্তফা সরোয়ার ফারুকীর নাটক, সিনেমা ও টেলিফিল্মের সাবলীলতার ইনফ্লুয়েন্স বর্তমান টেলিফিল্মগুলোর উপর বেশ চোখে পড়ে। বিকাল বেলার পাখি  তার ব্যতিক্রম না হলেও এর নিজস্ব একটা স্বকীয়তা আছে, যা অনেকটাই সিনেমাটিক। বিশেষত এর কালার স্কিম ও ফ্রেমিং-এ। যা দিয়ে রাজীব বেশ সফল্ভাবে তুলে ধরেছেন টেলিফিল্মটির প্রধান বিষয়ঃ মধ্যবিত্ত জীবন।  সিনেমাটির ওপেনিং সীনেই দেখা যায় একটি মাছের বাজারের দৃশ্য; এবং চোখে পড়ে বাবা ও ছেলের একসাথে বাজার করার দৃশ্য। ম...

মফস্বল স্বপ্ন ও একটি লাঞ্চবক্সের গল্প

Image
[minor spoilers] সাবার্বান, মফস্বল, মধ্যবিত্ত যেটাই বলা হোক না কেন - এই ধরণের জীবনের ব্যাপারগুলোকে সেলুলয়েডে বন্দি হতে দেখার অনুভূতিটাই অন্য। না হাই-পলিশড কাচের তৈরি সেটিং, না নাইট্রো ফুয়েল্ড ১৭০-এমপিএইছ, বা জটিল লজিকের সিনেমা (যদিও জটিল লজিকের সিনেমাগুলোই আমার লিস্টে প্রথমদিকে থাকে)। যেই কারণে হুমায়ুন আহমেদের বই পড়তে, বা ওং কার-ওয়াই এর সিনেমা দেখতে ভালো লাগে। পশ্চিমা 'সাবার্ব' থেকে এশিয়ান 'মফস্বল' এর পার্থক্য এভাবেও চোখে পড়ে। যাইহোক, ভালো নোট দিয়ে The Lunchbox (2013) এর রিভিউ শুরু করলাম।    হিন্দি সিনেমা কম দেখার দলে আমি, এটা বলার অপেক্ষা রাখেনা - সবার মত 'থ্রি ইডিওটস'ও অলসতার ছলে অনেকদিন দেখা পিছিয়ে রেখেছিলাম। তারপর ইন্ডি ধাচের 'দি লাঞ্চবক্স'এর নাম দেখে আমিও উৎসুক হলাম। রিতেশ বাত্রার ডেব্যু ফিচার ফিল্মঃ বাফটা, কান-এ জয়জয়কার।   গল্পটা সিম্পলঃ ইলা নামের এক মধ্যবিত্ত গৃহিণী তার চাকরিজীবী স্বামীর জন্য খাওয়া রান্না করে পাঠায় লাঞ্চবক্স বা 'ডিব্বা' ডেলিভারি সার্ভিসের মাধ্যমেঃ গোলমাল বাঁধে যখন ঠিকানা অদলবদল হয়ে যায়; এভাবে তৈরি হয় ...

একটি রুম ও আমার জীবনের ১ঘন্টা ৪০মিনিট (অ্যাপ্রোক্সিমেটলি)

Image
শুরুতে আমার জানা একটি টিডবিড দিয়ে শুরু করি। ইন্সুরেন্স ও সার বিক্রেতা হ্যারোল্ড পি. ওয়ারেন একাডেমি অ্যাওয়ার্ডপ্রাপ্ত স্টারলিং সিলিফ্যান্টের সাথে একটি বাজি ধরেছিলেন যে, যে কেউই সিনেমা লিখে বানাতেও পারে। এভাবে মুক্তি পায় ১৯৬৬ সালে মানোসঃ দি হ্যান্ডস অফ ফেইট ; বাকিটা ইতিহাস। বলা বাহুল্য, ওয়ারেন বাজিতে জিতেছিলেন কারণ তিনি ফিল্মটা বানিয়ে শেষ করতে পেরেছিলেন। টমি উইসও এরকম কোন বেট করেছেন বলে জানা নেই - তবে 'দি রুম' এখন পরিচিত 'সিটিজেন কেইন অফ ব্যাড মুভিস' হিসেবে, আবার অন্যতম কাল্ট ক্লাসিক হিসেবে।   হ্যা, লিসার মা, আমিও এই প্রশ্ন অনেকবার করেছি... গল্প হলো এরকমঃ সফল ব্যাঙ্কার এবং চাকরস্বামী (চাকর যে স্বামী) জনির সাথে লিসার কথা পাকাপাকি। এরপর লিসা ঠিক করে সে জনিকে ভালোবাসেনা। ট্র্যাজেডি আনফোল্ডস।  যদিও ফিল্মটি (মেলো)ড্রামা কিন্তু ক্রিটিকরা স্বাচ্ছন্দ্যেই একে কমেডি হিসেবে রিভিউ দেন। কিভাবে ফোনের অপর প্রান্তের কথা টেপ রেকর্ডে ধরা পড়ে বা সেফটি ক্যাচ ছাড়া গুলি ফায়ার হয় ইত্যাদি টেকনিক্যালিটিতে গেলাম না। ১৫ সেকেন্ডে ফুল কিনে বের হয়ে যাওয়ার ব্যাপার, বা মার্কের সাথে...

The Virgin Suicides: রঙিন চশমা

Image
[ minor spoilers ] সোফিয়া কপোলার হাতে 'দ্য ভার্জিন সুইসাইডস' এর একটি কপি আসার পর তিনি চিন্তা করেছিলেন এটা নিয়ে বানিয়ে ফেলবেন একটি ফিল্ম। তারপর এসে পড়ে The Virgin Suicides (১৯৯৯)। অন্যদিকে, জেফ্রি ইউজিনিডিসের ১৯৯৩ নভেল 'দ্য ভার্জিন সুইসাইডস' একটা মিক্সড রিঅ্যাকশন নভেলঃ কেউ একে ভালোবাসে, আবার কেউ একে মনেপ্রাণে ঘৃণা করে। নভেল নিয়ে যেই মতামতই হোক, কপোলার ফিচার ফিল্মটি নিঃসন্দেহে তার অন্যতম মাস্টারপিস, যার অ্যাস্থেটিকগুলো এখনো সত্তর/আশি দশকের থিমের ফিল্মমেকারদের অনুপ্রাণিত করে।    বই অ্যাডাপশন হিসেবে সিনেমাটি যথেষ্ট অনুগত - সিনেমার ন্যারেশনেও বইটির ফার্স্ট পার্সন প্লুরাল কণ্ঠ ব্যবহৃত হয়েছে, যার জন্য অনেকে এটিকে গ্রিক কোরাস বলে থাকেন (উল্লেখ্যঃ গ্রিক কোরাস ব্যাপারটা হলো একদল মুখোশধারী পার্ফরমার যারা একস্বরে এক চরিত্র হয়ে কথা বলে কোন একটি ড্রামাটিক ঘটনা নিয়ে। গ্রিক নাটক থেকে অনুপ্রাণিত)। যদিও লেখক মজা করে বলেন, আমার নাম ইউজিনিডিস না হলে এটাকে কেউ গ্রিক কোরাস বলতোনা। যাইহোক, এই নামহীন বক্তা একদল ছেলের পক্ষে কথা বলেন, যারা বড় হয়ে নিজেদের পরিবার নিয়ে জীবন পার কর...

রিভিউঃ Sala samobójców (2011)

Image
আত্মহত্যা ব্যাপারটা নিয়ে ডিয়েল করা সিনেমাগুলো বেশিরভাগই একটু ইন্ডি বা আন্ডারগ্রাউন্ড ধরনের, আমার দেখা অন্যান্য পলিশ ডাইরেক্টরদের সিনেমাগুলোও। সেই হিসেবে ইয়ান কোমাসার তৃতীয় ফিচার ফিল্ম Sala samobójców (2011) বা Suicide Room মেইন্সট্রিমের দিকে। গল্পের ব্যাপারটা এরকম, পলিটিশিয়ান বাবা ও অ্যাডভার্টাইজিং সিইও মায়ের একমাত্র সন্তান ডমিনিক সান্তোর্স্কি। ধনী পরিবার, দামি প্রাইভেট স্কুল, হুলুস্থুল ব্যাপার। প্রমের সময় একটা ঘটনায় সবাই বিশ্বাস করতে শুরু করে যে ডমিনিক হোমোসেক্সুয়াল, শুরু হয় সাইবার বুলিইং। এক পর্যায়ে ডমিনিক পরিচিত হয় সিল্ভিয়ার সাথে - সে প্রধান একটি 'ওয়ার্ল্ড অফ ওয়ারক্রাফট' অনুপ্রাণিত অনলাইন ভার্চুয়াল জগতের, যার নাম সালা সামোবইসভ, বা সুইসাইড রুম। ফিল্মটি দেখার প্রথম ইম্প্রশন হচ্ছেঃ ইমোকোর। আমাদের টিনেজ বয়সের 'সবুজ রুমে কালো চুলের ছেলে কালো হুডি পড়ে মাটিতে বসে আছে' জাতীয় ছবি প্রোফাইল পিকচার দেওয়া আর 'বুলেভার্ড অফ ব্রোকেন ড্রিমস' গান শোনার দিনের কথা মনে পড়ে গেল। তবে সিনেমাটিতে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ থিম উঠে এসেছে - একাকীত্ব, ডিপ্রেশন, সুইসাইডাল টেন্ডেন্...

অ্যাবসার্ডিসমঃ সুইসাইড ও ভালোবাসা

Image
[ minor spoilers ] ফিলসফিতে অ্যাবসার্ডিস্ম বলে একটা শাখা আছে - বলা যায় এক্সিস্টেনশিয়ালিস্ম লাইনের দর্শনে। নিহিলিজম থেকে প্রশ্ন আসে যে পৃথিবীর কোন মিনিং নেই এবং তাহলে স্পিশিস হিসেবে আমাদের অস্তিত্বের কোন অর্থ নেই? এর উত্তর হিসেবে সার্ত্রে একটা মত দেন যা এক্সিস্টেনশিয়ালিস্ম নামে পরিচিত - তার মতে পৃথিবীর সৃষ্টিগতভাবে কোন অর্থ নেই সেটি ছাড়া, যা আমরা দিয়ে থাকিঃ একটি চেয়ার হচ্ছে চেয়ার, বসার জন্য কারণ আমরা তার রোল ঠিক করেছি সেভাবেই...যাইহোক তিনি বলে থাকেন - মানুষ হিসেবে আমাদের জীবনের অর্থ তখনই তৈরি হয় যখন আমরা সেটা নিজেরা যাচাই করে নেই।  এই যে বের করে নেওয়ার প্রক্রিয়াটি, এটি কিন্তু শেষ বিচারের হিসেবে শূন্যঃ একটি চেয়ার, চেয়ার হলেও পৃথিবী ঘুরবে, না হলেও। কিন্তু কাঠের টুকরাটিকে চেয়ারের রোল দেয়া হয় বলে এটি কাঠের টুকরোর চেয়ে বেশি কিছু। আমরা কাঠের টুকরো নই যেহেতু তাই আমাদের রোল আমাদের নিজেদেরই বের করতে হবে। যদিও সেটিও শেষ বিচারে শূন্যইঃ তাহলে এই ''মিনিং'' খোঁজ করার ব্যাপারটা 'অ্যাবসার্ড', বা...অদ্ভূত না? কিন্তু তারপরও আমরা খুঁজে যাই - আর এটিই অ্যাবসার্ডিস্ম।        ...

কানাশিমি নো বেলাদোন্নাঃ এম্পাওয়ারমেন্ট ও কালচারাল ন্যারেটিভ

Image
[ minor spoilers ] ফিল্ম নিয়ে কথা বলা হবে আর ফেমিনিজম নিয়ে কথা হবেনা ? স্বাভাবিকভাবেই বর্তমান পরিপ্রেক্ষিতে ফেমিনিস্ট মুভমেন্টের সাথে ইনক্লুসিটিভিটি অর্থাৎ সব বর্ণ, এথনিসিটি এবং জেন্ডার স্পেক্ট্রামের সম্মিলন ও এর সমপর্যায়ের আলোচনা ইত্যাদি অনেক বিষয় লাইমলাইটে এসেছে; কিন্তু এর গোড়াটি ছিল আরো বেশি সরলরৈখিক, কিন্তু আরো বেশি কঠিন। বাংলার সমাজের, বিশেষ করে বাঙালি মুসলিম সমাজের জন্ম হিসেবে আমাদের প্রথমে জানা, 'ফার্স্ট লাইট' ছিলেন বেগম রোকেয়া (১৮৮০-১৯৩২)।   ওয়েস্টার্ন সমাজের ফেমিনিজমের ইতিহাস আরেকটু পুরোনো, আরেকটু পলিটিক্যাল। মিসোগাইনির বিরুদ্ধে লেখা শুরু হয় ১৪শ-১৫শ শতকের মাঝামাঝি সময়ে, কিন্তু প্রকৃত রূপ পায় অষ্টাদশ শতকের শেষে, রেঁনেসা যুগের শেষ পর্যায়ে, যা 'দি এইজ অফ এনলাইটেনমেন্ট' নামে পরিচিত। এই সময়ে নারীদের ভোটাধিকারসহ পুরুষের সমপর্যায়ের রাজনৈতিক অধিকারের জন্য ও নারী-পুরুষের জন্য অবস্থিত নৈতিকতার অসম স্ট্যান্ডার্ড নিয়ে লেখালেখি করেন  লর্ড বেন্থাম, মেরি ওলস্টোনক্রাফট প্রমুখ।  যার স্রোত আমরা উপমহাদেশে পেয়েছি পরের শতকে - তবে আমাদের শুরুটা ছিল শুধুই শিক্ষার অধ...